সমাজের আপোষহীন এক নারী কল্পনা বেগম। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে শুরু করেছেন জীবন। যদিও সহজ ছিলো না তার এই বন্ধুর পথ। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কখনও ইটভাটায়, কখনও নির্মাণ শ্রমিক আবার কখনও বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করে বিক্রি করে উপার্জন করছেন। চালাচ্ছেন সংসার। আর কষ্টার্জিত টাকায় সংসারের ব্যয় মিটানোর পর একটি মামলার খরচও যোগাচ্ছেন।
তার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাসই তাকে করেছে সাহসী ও কর্মক্ষম। আর এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ও বিভাগ পর্যায়ে পেয়েছেন ২য় শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মান। এখন তাকে অনুসরণ করে গ্রামের অনেক বেকার নারী-পুরুষ অনুপ্রাণিত হয়ে কর্মক্ষম হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চারাইলদার গ্রামের গরীব ঘরের মেয়ে কল্পনা বেগম। ৫ ভাইবোনের মধ্যে মা বাবার দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় কল্পনার বিয়ে হয় এক মাদকসেবীর সঙ্গে। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ৩ মাসের পুত্র সন্তান নিয়ে পাড়ি জমান রাজধানী শহর ঢাকায়। কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ানো এই কল্পনা বেগমের ঠাঁই মেলে নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে। শত কষ্টের পরও ভালোই চলছিল তার ছোট্ট সংসার। ভাতের অভাব থাকলেও অভাব ছিলো না সুখের। কিন্তু সেই সুখে বাধ সাধে ৭ বখাটে।
কল্পনা বেগম ঢাকা মেইলকে জানান, ২০০৭ সালের ২৯ মে কর্মস্থল থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে ৭ বখাটে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। জ্ঞানহীন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে র্যাব। এ ঘটনায় তিনি নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তাকে চাকুরিচ্যুত করে। তার স্বামীও তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। সুখে থাকা কল্পনা বেগমের সংসারে নেমে আসে দুঃখের পাহাড়।
জানা গেছে, মামলা পরিচালনার পাশাপাশি নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপার, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তিনি। কষ্টার্জিত শ্রমের টাকায় পরিচালিত মামলাতেই একদিন বিজয়ী হবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস কল্পনা বেগমের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় কল্পনা বেগমের করুন কাহিনীগুলো ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা, পরে ২০১৮ সালে জামালপুর জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা, এরপর ময়মনসিংহ বিভাগীয় পর্যায়ে ২য় শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে উপাধি পান সাহসী এই নারী। এছাড়াও নানা সময়ে বিভিন্ন সংগঠন নানা পুরস্কারে ভূষিত করে কল্পনা বেগমকে। এত কিছুর পরও জীবনের কাছে হার মানতে চাননি তিনি। বর্তমানে কল্পনা বেগম দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার করছেন। কখনো থাকেন জামালপুরে আবার কখনো নারায়ণগঞ্জে।
বিজ্ঞাপন
তবে কল্পনা বেগমের অভিযোগ, মামলার দীর্ঘদিন পরেও কোনও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় তার শত কষ্ট বিফলের পথে। এছাড়াও নানা সময় হুমকি পাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। তার দাবি অতি দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা। এছাড়াও আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। তাই সরকারি সহায়তার দাবিও জানান তিনি।
জামালপুর মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামরুন্নাহার বলেন, “যেকোনো সহায়তায় তার পাশে রয়েছি আমরা। এছাড়া তার মানসিক, সামাজিক উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবে জেলা মহিলা অধিদপ্তর।”
এএ