আকাশে পবিত্র ঈদুল ফিতরে চাঁদ উঠতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। কেনাকাটায় ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ পিছিয়ে নেই। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা ছুটছেন ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও বিপণি-বিতানগুলোতে। বিশেষ করে ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
রাজধানীর পল্টন-গুলিস্তানের ঈদ বাজারের কেনাকাটায় স্বস্তির দেখা মিলেছে সীমিত আয়ের মানুষের চোখেমুখে। অল্প দামে পছন্দের জিনিস মেলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করতে নারী-পুরুষ-শিশু সবাই খুশি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৪ মার্চ) দিনভর গুলিস্তান ও পল্টন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট ছিল এখানকার বিকিকিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তান হল সংলগ্ন সড়ক থেকে গোলাপ শাহ মাজারের দিকে যেতে সংযোগ সড়কটিতে যান চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পুরো সড়ক জুড়ে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ ভ্যানে, কেউ চৌকিতে আবার কেউ মাটিতেই পণ্য নিয়ে বসেছেন। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। ভিড় ঠেলেই পছন্দের পণ্য কিনছেন সবাই।
পল্টন থেকে শুরু করে গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রায় সব ধরনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে। প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা-বেল্ট, শাড়ি, মানিব্যাগ, চশমা থেকে শুরু করে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের পোশাকই মিলছে এখানে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায় মিলছে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গিসহ বাচ্চাদের পোশাক।
বিজ্ঞাপন
ঈদ কেনাকাটার বাড়তি হিসেব নিম্ন-মধ্যবিত্ত অনেক মানুষের জন্যই গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে। একারণেই ঢাকার অভিজাত শপিংমলগুলো নয়, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য ঈদের বাজার মানেই গুলিস্তানের ফুটপাত। কম দামে ভালো পোশাকের খোঁজে তাদের ছুটে চলা। দাম-দরে ২০০-৩০০ টাকাতেও তারা কিনেছেন পছন্দের পোশাক।
বাইতুল মোকাররমের উত্তরগেট সংলগ্ন ফুটপাতে নিজের জন্য পোশাক দেখছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওলী আহমেদ।
তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমারও একটা ছোট্ট দোকান আছে। সেটা দিয়েই সংসার চলে। গত সপ্তাহেই পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনেছি। ছেলে-মেয়েরা নতুন পোশাক পেয়ে অনেক খুশি। ওদের খুশিতেই আমাদের ঈদ। ঈদে আমি বাজার করতে চাই না।
বর্তমানে সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হিমশিম খাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এসময়ে তো অনেক খরচ। সব সামলাতে গিয়ে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু নিজের জন্য যদি কিছুই যদি না নিই, তখন ছেলে-মেয়েরা রাগ করে। তাই গুলিস্তানে আসলাম। এখানে কম দামে ভালো পোশাক পাওয়া যায়। এখানে জুতা কিনেছি। এখন একটা জামা আর পাঞ্জাবি দেখছি। আর এখানে দাম নিয়ে বাধে না। শুধু পছন্দটা করতে হয়।
শুধু ওলি আহমেদই নন, নুরজাহান বেগমও পরিবারের সবার বাজার শেষে গুলিস্তানে এসেছেন নিজের জন্য বাজার করতে। আবেগ আপ্লুত হয়ে বলছিলেন সেই কথাই।
তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গুলিস্তানে যে পোশাক পাওয়া যায়, তার মান খুব যে খারাপ তেমনটা না। কিন্তু এখানে দামটা অনেক কম হয়। একই পোশাক ব্র্যান্ডের দোকানে হয়তো ১৯-২০ হবে। কিন্তু দাম ৫-১০ গুন।’
নূরজাহান বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা ব্র্যান্ড শো-রুম ছাড়া ঈদের বাজার করবে না। তাদের আবদার বছরের একটা দিন পূরণ না করে পারি না। আর আমি প্রতিবছরই এখান থেকে দেখে-শুনে বাজার করি। আসলে আমার স্বামী করোনার সময় মারা গেছে। তার রেখে যাওয়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে উঠি। তবুও আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।’
ফুটপাত ব্যবসায়ী সোহেল আলী বলেন, আমি বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করি। গরমের কারণে স্বস্তি মিলবে এমন আইটেমগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক ১০-১২ হাজার টাকার বেচা বিক্রি হচ্ছে। আমার এখানে ৩০০-৫০০ টাকা দামের পোশাকগুলোই বেশি বিক্রি হয়।
গুলিস্তানের পাঞ্জাবি বিক্রেতা আহম্মদ আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ২২ বছর ধরে পাঞ্জাবি বিক্রি করি। কম দামে ভালো পাঞ্জাবি দেওয়ার চেষ্টা করি। আর ঈদের সময় তো মৌসুমি বিক্রেতার সংখ্যাও থাকে। সবমিলিয়ে বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ পান না ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ইদকে সামনে রেখে টুপির বেচাবিক্রিও জমে উঠেছে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার টুপিও কিনছেন ক্রেতারা।
দোকানি সিফাত আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদে টুপির চাহিদা ভালো থাকে। তবে বেশি দামি টুপির বেচাবিক্রি কমই হয়।
ঈদের যে কয়দিন বাকি আছে তাতে বিক্রি আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইএ