কদিন পরেই ঈদ। এরই মধ্যে জমে উঠেছে খুলনার ঈদবাজার। ঈদের কেনাকাটায় ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ পিছিয়ে নেই। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা ছুটছেন ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও বিপণি-বিতানগুলোতে। আর এ সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী নিম্নমানের কাপড়সহ তৈরি পোশাক ও ভারতীয় পোশাক বেশি দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত মুনাফা।
রোববার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত সবখানে চলছে কেনাকাটা। প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে।
বিজ্ঞাপন
নগরীর সোনাডাঙ্গা থেকে শিববাড়ী মোড় দু’পাশের অভিজাত বিপণিবিতান, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, নিক্সন মার্কেট, নিউমার্কেট, দৌলতপুর রেলওয়ে মার্কেট, খালিশপুর মার্কেটে একই অবস্থা।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, একই পণ্য অন্য সময়ে যে দামে কিনতে পারি সেই একই পণ্য ঈদের সময় বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিকার বাড়তি দামে কাপড় বিক্রির অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে।
সোনাডাঙ্গা থেকে শিববাড়ী মোড় দু’পাশের অভিজাত বিপণি বিতানগুলো মূলত উচ্চবিত্তদের পছন্দের কেনাকাটার জায়গা। দেশ সেরা ব্রান্ডের শোরুমগুলো এখানে।
বিজ্ঞাপন
ইজি ব্রান্ডের শোরুম ম্যানেজার মো. সানি বলেন, আমাদের শোরুমে বেশিরভাগই বড়দের পোষাক। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে নতুন নতুন কালেকশন রাখা হয়েছে। সাড়া পাচ্ছিও ভালো। টি-শার্ট ও শার্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে। চাঁদরাত পর্যন্ত এমন ভিড় থাকবে বলে প্রত্যাশা তার।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড় খুলনা শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতার চাপে ভেতরে প্রবেশ করা যেন দায়। সেখানকার বড় বড় দোকানের মধ্যে রয়েছে মারিয়াম এন্টারপ্রাইজ এবং বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ। দোকানে ক্রেতাদের সামাল দিতে মালিক ও কর্মচারীদের হিমশিম খেতে দেখা যায়। এবার ওই দুই দোকানে ইন্ডিয়ান পোশাকের সমারোহ কম দেখা গেছে। বেশি ছিল পাকিস্তানি পোশাক। পোশাকের মধ্যে রয়েছে নুরস, মতিস, নিভাইস এবং তাওক্কাল। উল্লিখিত এ পোশাকগুলো সাড়ে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
মারিয়াম এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. আল আমিন হোসেন মিঠু বলেন, ক্রেতাদের আকর্ষণ এখন পাকিস্তানি পোশাকের প্রতি। টিস্যু এবং ওয়েটলেস হওয়ার কারণে ক্রেতারা পকিস্তানি পোশাক নিচ্ছেন বেশি।
এছাড়া ডাকবাংলা এলাকায় নিক্সন মার্কেটে মানুষের ভিড় লেগে আছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ কেনাকাটার জন্য এসব মার্কেটকে বেছে নিচ্ছেন। আর যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের জন্য ফুটপাতই ভরসা। এর ফলে বিক্রির কমতি নেই ফুটপাতেও।
নগরীর বেশ কয়েকজন পোশাক বিক্রেতা জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে মার্কেটগুলোতে। ক্রেতারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও প্যান্ট, জুতা, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য জিনিস কিনছেন।
জেলা পরিষদের জুতার দোকান ইউনিক সম্রাট দোকানের মালিক মামুনুর রশিদ বলেন, আমি মূলত লেডিস ও বাচ্চাদের আইটেম বিক্রি করি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় বেচাকেনা কিছুটা কম।
খুলনা সুন্দরবন কলেজের শিক্ষার্থী মেহজাবিন এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। তিনি জানান, সারাবছর জামা কাপড় কিনলেও ঈদে নতুন জামা না কিনলে হয় না। বাবা টাকা পাঠিয়েছে, নিজের জন্য আর ছোট ভাইয়ের জন্য কেনাকাটা করব। কিন্তু জামাকাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি।
ক্রেতা শাহানা ইয়াসমিন বলেন, ঈদে নতুন পোশাক না হলে বেমানান লাগে। তাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবার জন্য নতুন কাপড় কিনতে এসেছি। ভালো পোশাকটাই কিনব। দাম বেশি হলেও কিনব।
এদিকে ঈদ কেনাকাটায় শুধু কাপড়ের দোকানে নয় ভিড় হচ্ছে জুতা, কসমেটিক্স প্রসাধনীসহ অন্যান্য দোকানগুলোতেও। ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে প্রায় সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, ট্রাউজার, বাচ্চাদের পোশাক, শাড়ি, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থ্রি-পিস, বেল্ট, জুতা, গেঞ্জি, লুঙ্গি ইত্যাদি। তবে এই মুহূর্তে ক্রেতাদের আকর্ষণ এবং আগ্রহ বেশি বাচ্চাদের পোশাকের দিকে।
খুলনা বিপণিবিতানের সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, জমজমাট কেনাবেচা হলেও সব দোকানে সমান না। যেসব দোকান ক্রেতাদের আকর্ষণ করার মতো পোষাক সংগ্রহে রেখেছে তারাই বেশি ক্রেতা পাচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা ভালো বেচাকেনা করতে পারবে বলে আশা করি।
প্রতিনিধি/এসএস