ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুসঙ্গ নতুন পোশাক। সাধ্যের আলোকে ছোট-বড় সবাই চায় ভালো পোশাক পরতে। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বাদ পূরণ হয় না অনেকের। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা নামি-দামি ব্যান্ড পছন্দ করলেও কেনার সামর্থ্য নেই। বড় বড় শপিং মলগুলোতে যেতে তারা সাহস পান না। তাই ঈদের কেনাকাটায় তাদের ভরসার জায়গা ফুটপাতের দোকানগুলো। আয় ও ব্যয়ের টানাপোড়েনে থাকা মানুষেরা বলছেন, ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে, কিন্তু সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। এজন্য ঈদের কেনাকাটায় ফুটপাতই ভরসা।
রাজধানীর বিভিন্ন ঈদ বাজার ঘুরে এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের ক্রেতারা জানান, রাজধানীর বড় বড় মার্কেটে গেলে কাপড়ের দাম অনেক বেশি চায়। সেই সামর্থ্য তাদের নেই। এজন্য ফুটপাতকেই কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের হাজারও মানুষও ঝুঁকছে ফুটপাতে। ফলে সেখানে ক্রেতার সমাগম বেড়েছে। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারা তাদের পণ্যের চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন।
তবে দাম বেশি চাইলেও দোকানিরা পারতপক্ষে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না ক্রেতাদের। ঈদের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে না পারলে পরে লোকসান গুনতে হবে এমন আশঙ্কা থেকে অল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান বিক্রেতারা। রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকা ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের ফুটপাতে পাঞ্জাবির দোকানি আবির হোসেন ঢাকা মেইলকে জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঋণ করে দোকানে মাল তুলেছেন। ঈদের পরপরই সেই ঋণ আদায় করতে হবে। এজন্য লাভ কম হলেও তিনি পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। আশপাশের অন্য দোকানিরাও কম লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান এই বিক্রেতা।
সায়েন্সল্যাব এলাকায় মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন আলম খান। তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা এই ফুটপাতই। মার্কেটে ঢুকতে সাহস পাই না। রাস্তা থেকে ভালো দেখে কেনার চেষ্টা করছি। মার্কেট থেকে কিছুটা কম দামে পাওয়া যায় এখানে।
গুলিস্তানে কেনাকাটা করতে আসা সাজেদা বেগম বলেন, স্বামী, ছেলে, মেয়ে ও নিজের জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। ফুটপাতেও অনেক সময় ভালো কিছু পাওয়া যায়। তবে দেখে কিনতে হয়। আবার কিছু জিনিস মার্কেট থেকেও কিনব। যেখানে যেটা ভালো পাই নেব।
এদিকে নিম্নবিত্তের ঈদবাজারে মধ্যবিত্তের ভিড় বাড়ার বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাদের ভাষ্য, মধ্যবিত্তদের একটি অংশ শুধু নিম্নবিত্তের বাজার থেকে ঈদ কেনাকাটাই নয়, খাদ্যসহ জীবন ধারণের সব ধরনের পণ্যই কিনছে। কারণ, মূল্যস্ফীতির চাপে পরোক্ষভাবে তাদের আয় কমে গেছে। এছাড়া নতুন করে লাখ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে এসেছে। যার পরিসংখ্যান এখনো অজানা।
রাজধানীর কাওবাজারের ফুটপাত থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন বরিশালের সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, ভালো মার্কেট থেকে কিনতে গেলে অনেক দাম নেয় এবং মোটা টাকা খরচ হয়। এজন্য পরিবারের লোকজনের জন্য এখান থেকে কাপড় কিনলাম।
গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের বিপরীতে রাস্তার ফুটপাত থেকে নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছেন পোশাক কারখানার কর্মী মামুন মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এটাই ভালো।
সারি সারি এসব দোকান থেকে পছন্দমতো জামা-কাপড় কিনছেন অনেকে। নগরীর অনেক মানুষের নামিদামি শপিং মলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন। প্রিয়জনকে ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনে দেন ফুটপাত থেকেই।
নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার জায়গা ফুটপাতে তুলনামূলক বেশি আয়ের মানুষেরও আনাগোনা দেখা যায়। অবশ্য এসব বিষয়ে নিয়ে ফুটপাতের ব্যসায়ীরা বলছেন, এবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের চেয়ে ফুটপাতে ক্রেতাদের একটু বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশ ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফুটপাতের এসব ব্যবসায়ীরা।
এমআর/জেবি