পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজশাহীতে জমে উঠেছে কেনাবেচা। ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেটগুলোতে পা ফেলার ঠাঁই নেই। কেনাকাটা চলছে সকাল ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবু যেন সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ক্রেতারা মার্কেটে এসে শুধু পণ্য দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের ভাষ্য, বিক্রেতারা কয়েক গুণ বেশি দাম চাইছেন। সেজন্য ঘুরে ঘুরে দেখে দামদর করে পছন্দের জিনিস কিনতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বড় মার্কেটগুলোর সামনে সাজানো হয়েছে রংবেরঙের তোরণ। রাতে রঙিন আলোয় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে নগরী। কেনাকাটা করতে প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। নগরীর আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, কোর্ট বাজার, উপশহর মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে প্রতিদিনই।
বিজ্ঞাপন
বড় মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নারী। গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছেন তারা। শিশু সন্তানদের সঙ্গে এনে কিনছেন পছন্দের জিনিস। কাপড় ও কসমেটিকসের দোকানে বেশি সমাগম হচ্ছে ক্রেতাদের। দোকানগুলোতে পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, লুঙ্গি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজ, ওড়না ও শাড়ির বাহারি ডিজাইন তাদের নজর কাড়ছে।
ক্রেতারা বলছেন, অজুহাত দেখিয়ে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক গুণ বেশি দাম চাইছেন। ঈদ এলেই এটা যেন তাদের পুরনো অভ্যাস। সাধ্যের বাইরে হওয়ায় দামদর করে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
জেলার বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ থেকে আরডিএ মার্কেটে কেনাকাটার জন্য আসেন শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, মা-বাবার জন্য পোশাক কিনতে মার্কেটে এসেছি। কিন্তু অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন দোকানদাররা। ঘুরে ঘুরে দেখছি। দাম যেটাই হোক, মায়ের জন্য কিনতে তো হবেই।
বিজ্ঞাপন
আব্দুর রশিদ নামে আরেক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, বেশকিছু পণ্য কিনতে হতো। কিন্তু দাম চড়া হওয়ায় শুধু একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। এটা দিয়েই এ বছর ঈদ উদযাপন করব।
ছোট শিশুকে নিয়ে শপিং করতে আসা মাহফুজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামই চড়া। ছেলের জন্য একটি পাঞ্জাবি ও একটি প্যান্ট কিনেছি। আমি পুরাতন পোশাকেই ঈদ করব।
আয়েশা সিদ্দিকা নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। ওদের আবদার পূরণ করতে হবে। দাম তুলনামূলক বেশিই মনে হচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলা থেকে স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ মার্কেটে আসা বাবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, কিনতে এসে বাচ্চাদের দাম বেশি। তবু কিনে দিতেই হবে। ঘুরে দেখছি। পছন্দ করে কিনবো।
জিসান নামে তৃতীয় শ্রেণির এক শিশু জামা পেয়ে বড্ড খুশি। সে ঢাকা মেইলকে বলে, ‘পাপ্পা নতুন জামা কিনে দিয়েছে। এবার এটা পরে ঈদ করবো।’
এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছর করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তারা বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা বাড়তি দাম চাইছেন। এ বছর ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও আশানুরূপ বেচাবিক্রি নেই। অনেক দোকানে অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবু লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে রমজানের শেষ দু-তিন দিন পুরোদমে বেচাবিক্রি হবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
আরডিএ মার্কেটের খান বাজার দোকানের মালিক মো. ওয়াসিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রোজা হিসেবে যে রকম বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, সে রকম হচ্ছে না। শবে বরাত থেকে রমজান পর্যন্ত কিছুটা বিক্রি হয়েছিল। তবে রোজার শুরু থেকে ব্যবসা ডাউন।’
ওয়ান পয়েন্ট ফ্যাশনের বিক্রেতা নয়ন বলেন, ‘ঈদকে ঘিরে সব রকমের কালেকশন আনা হয়েছে। কিন্তু এখনও মার্কেটে বেচাকেনা তুলনামূলক কম।’
রঙবেরঙ ক্লথ স্টোরের মালিক মো. রনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের বেচাবিক্রি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বেশি হয়। ঈদের ছুটিতে আগেভাগেই তারা বাসায় চলে গেছে মেস ছেড়ে। সেজন্য লোকাল কাস্টমার কম। তবু আলহামদুল্লিাহ। আসলে জিনিসের দাম বেশি, তাই ক্যাশ লাগছে বেশি। সেজন্য টাকার হিসাবে এবারের ব্যবসা না।’
হাদিয়া পাঞ্জাবি হাউজের মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের নিয়ে আমার ব্যবসা বেশি চলে। ছাত্ররা প্রায় চলে গেছে। আশপাশের এলাকা ও উপজেলা থেকে কিছু কাস্টমার আসছে। আর বাকি ব্যবসায়ীরাই কিনছে পাঞ্জাবি। সন্ধ্যার পর ভিড় বেশি হয়।’
এ বিষয়ে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রাজশাহীতে ব্যবসা মূলত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে হয়। স্কুল-কলেজ থাকে, তাই বেশি বেচাবিক্রি হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় ঈদে ভালো ব্যবসা জমেনি। কিন্তু এবার ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো সেভাবে বেচাকেনা না হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছি।’
এ ব্যাপারে রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মামুদ হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ক্রেতাদের ভিড় হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু একজনের পণ্য কিনতে সঙ্গে আসছেন ৪-৫ জন। তাদের মধ্যে অনেকে পোশাক দেখে না কিনেই ফিরে যচ্ছেন। সেজন্য বেচাকেনার অবস্থা ভালো বলা যাচ্ছে না।’
প্রতিনিধি/জেবি