রোববার, ৩০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

অভিজাত মার্কেটগুলোতে প্রতারণার শিকার ক্রেতারা!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
চট্টগ্রামে অভিজাত মার্কেটে ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ছবি: ঢাকা মেইল

ভিসা জটিলতার কারণে এবার ঈদের মার্কেটে আমদানি হয়নি ভারতীয় পোশাক। তবে পাকিস্তানি পোশাক রয়েছে প্রচুর। চাহিদাও অনেক দুই দেশের পোশাকের। কিন্তু ভারতীয় পোশাক না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় তৈরি পোশাকে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ ট্যাগ লাগিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা।  

রোজার শুরু থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সবকটি অভিজাত মার্কেটে এমনসব কর্মকাণ্ড চলে আসছে। কিন্তু রোজার শেষে এসে চট্টগ্রামের অভিজাত শপিং মল মিমি সুপার মার্কেটে বিষয়টি ধরা পড়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে।


বিজ্ঞাপন


রোববার (২৩ মার্চ) সকালে পরিচালিত অভিযানে এই মার্কেটের ইএলই ও আকর্ষণ নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে এমন প্রতারণার দায়ে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে শনিবার (২২ মার্চ) সকালে একই প্রতারণার দায়ে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের সেলিম পাঞ্জাবি মিউজিয়ামকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

একই অভিযানে মিসেস সাথী স্টোর নামে এক প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনহীন প্রসাধনীসামগ্রী বিক্রি করায় আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন ইফতার বাজারে ইঁদুরের গন্ধযুক্ত পরিবেশ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যে মেয়াদ না থাকায় তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর।

আরও পড়ুন

সাধ ও সাধ্যের টানাপোড়েন, ঈদ কেনাকাটায় মধ্যবিত্তও ঝুঁকছে ফুটপাতে

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ। তিনি বলেন, মিমি সুপার মার্কেটে আকর্ষণ ও ইএলই নামে প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিদেশি বলে বিক্রি করছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত উচ্চমূল্যের পোশাকের ক্রয় ভাউচার দেখাতে বললেও দেখাতে পারেনি তারা। পরে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে দেশি পোশাক বিক্রি করার অপরাধে ইএলই-কে ৫০ হাজার ও আকর্ষণ-কে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।


বিজ্ঞাপন


Chittagong3

ফয়েজ উল্যাহ বলেন, শুধু মিমি সুপার মার্কেটে নয়, চট্টগ্রামের সবকটি অভিজাত মার্কেটে নানা কৌশলে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রতিযোগিতা চলছে। পুরনো কাপড়ে নতুন ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার মার্কেটগুলোতে আমদানি মূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে পোশাকসহ নানা পণ্য। প্রতারণার এমন চিত্র উদঘাটন করা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের। তাদের কাছে অসহায় ক্রেতারা।

তিনি আরও বলেন, রোজা শুরুর পর চট্টগ্রামে বিভিন্ন মার্কেট, আড়ত ও বাজারে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও অধিদফতরের টিম। অভিযানে পণ্যের কেনা-বেচায় বিস্তর অসঙ্গতি পায় টিমের সদস্যরা। দেখা গেছে চট্টগ্রামে কাপড়ের মার্কেট ফিক্সড প্রাইস হিসেবে পণ্যের গায়ে দাম ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকরাও দরকষাকষি ছাড়াই এসব পণ্য কিনছেন। নিয়ম অনুযায়ী পণ্যের গায়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অযৌক্তিক ও অবিশ্বাস্য মূল্যের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ায় গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাইস ট্যাগ না লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোড দিয়ে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দামও।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্যমতে, আমাদের সোর্স নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটে ৩০ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবীও আছে। কিন্তু অভিযানে গেলে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তা স্বীকার করছেন না। এখন তারা বলছেন, ৬-৭ হাজার টাকার বেশি দামের পাঞ্জাবি নেই।

আরও পড়ুন

গাউছিয়া-নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি 

ভারত থেকে আমদানি করেছেন- এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র দেখাতে বলেছিলাম। তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এমনকি এসব পাঞ্জাবির ক্রয়মূল্য কত তাও দেখাতে পারেননি। এসব অপরাধে সেলিম পাঞ্জাবি নামে প্রতিষ্ঠানটিতে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আভিযানিক টিম। একই অপরাধে পরিস্থান নামে অপর এক প্রতিষ্ঠানকেও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কোনো অবস্থাতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারেন শুধু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আর আমদানিকৃত পণ্য হলে আমদানিকারক। এর বাইরে কারো পণ্যের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার নেই।

সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। সুপার শপ থেকে শুরু করে সাধারণ দোকানেও নির্ধারিত ওই দামেই পণ্য বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পণ্যের দামে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অভিজাত মার্কেটগুলোতে ফিক্সড প্রাইসের নামে চলছে ভয়াবহ জালিয়াতি।

নগরীর মিমি সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মাহফুজুর রহমান বলেন, টেরিবাজারে যেসব থ্রি-পিসের দাম এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা; মিমি সুপার মার্কেটে একই মানের থ্রি-পিসের দাম নেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। টেরি বাজারে পাইকারি বাজারে যে শাড়ি আড়াই হাজার টাকা; একইমানের শাড়ি মিমি সুপার মার্কেট, সানমার শপিং সেন্টারসহ অভিজাত শপিং মলে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। হকার মার্কেট থেকে কাপড় কিনে নিয়ে নিউ মার্কেটের দোকানগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে দুই-তিনগুণ দামে।

Chittagong2

একাধিক ক্রেতা জানান, ঈদ মার্কেট ঘিরে চলছে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপট। মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে নতুন পণ্যের পাশাপাশি পুরোনো পণ্যকেও নতুন বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নতুন ট্যাগ লাগিয়ে। কিন্তু ক্রেতারা বুঝতে পারছেন না কোনটা নতুন আর কোনটা পুরোনো। বিশেষ করে ডিসকাউন্টের দোকানগুলোতে পুরোনো পণ্য বিক্রি চলছে বেশি। ঈদ কালেকশন ব্যানার টানিয়ে এই প্রতারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমার্কেট, সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, শপিং কমপেক্স, লাকি ফ্লাজা, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটসহ নগরীর অভিজাত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মার্কেটগুলো ঘুরেও দেখা গেছে এমন চিত্র।

আরও পড়ুন

এবার ঈদে চাঙা দেশি কাপড়ের বাজার

সাধারণ বা পাইকারি মার্কেটের সঙ্গে এসব মার্কেটের দামে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। যে পণ্যটি পাইকারি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়, সেটি অভিজাত মার্কেট পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযাগ, দোকানি বা প্রতিষ্ঠান মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬ অনুযায়ী, বস্ত্র নিত্য প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। কিন্তু এর দাম নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই। সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মাঝে মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কিছু জরিমানা করলেও দাম নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিংয়ের বিষয়ে তাদের কোনো ব্যবস্থা নেই।

আইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর