- সন্ধ্যার পর নিউমার্কেটে হাঁটা কষ্টসাধ্য
- বিক্রি বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ
- নারী ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
- অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক পুলিশ
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার কেনাকাটা। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে বিক্রি। রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে কেনাকাটার জন্য এখানে ছুটে আসছেন নগরবাসী। ঈদ উপলক্ষে গাউছিয়া-নিউমার্কেটের দোকানগুলোতে কেনাকাটা বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে থাকেন গাউছিয়া, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্টসহ আশেপাশের মার্কেটগুলোতে। ঠিক বিকেল চারটা থেকে বাড়তে থাকে ভিড়। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে নিউমার্কেট পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ঠাঁই থাকে না পা ফেলার। তখন চলাচলই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এতে সড়কেও লাগে থাকে দীর্ঘ যানজট, চলে না গাড়ির চাকা।
বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ
নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এখানকার গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের ভেতরেও জমজমাট বেচাকেনা চলছে। শুধু পোশাকের দোকানেই নয়, ভিড় রয়েছে নানা ধরনের গয়না, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, সুগন্ধি, পারফিউম এবং ডিজিটাল গ্যাজেটের দোকানগুলোতেও। পুরো এলাকা এবং মার্কেটে প্রচুর মানুষের ভিড়ের কারণে হাঁটতে হচ্ছে বেশ ধীরগতিতে।
এছাড়া পোশাক, জুতা, গহনা, প্রসাধনী, খেলনা ইত্যাদি পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা সড়কে সড়কে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী অমিত হাওলাদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এ বছর ঈদ উপলক্ষে অন্য বছরের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ কেনাকাটা বেড়েছে। গত বছর রমজানে তিনজন লোক দোকানে কাজ করেছে। এবছর চারজন কাজ করেও সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে। যতটুকু সম্ভব ক্রেতাদের হাতের নাগালে দাম রাখা হচ্ছে।’
আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোজায় বিক্রি ভালোই হচ্ছে, সামনের দিনে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে। সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে।’ একই সুর নিউমার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও।
ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি
এ বছর নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকায় কেনাকাটা বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। দশ রোজার পর থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। সামনে আরও যতদিন যাবে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।’
আরেক ব্যবসায়ী নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নারীদের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে কাপড় কেনার ক্ষেত্রে হালকা ও পাতলা বা যেগুলো গরমে আরামদায়ক সেসব পোশাকের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।’
গাউছুল আজম মার্কেটের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসাইন ঢাকা মেইলকে জানান, নিউমার্কেটে তার তিনটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলো নারী-পুরুষের সবধরনের পোশাক পাওয়া যায়। তার একটি দোকানে শার্ট, প্যান্টের চাহিদা বেশি। প্রতিদিনই বিক্রি বাড়ছে।
নারী ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
সন্ধ্যার পর থেকে শেষ অবধি উপচেপড়া ভিড় থাকে নারী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। প্রতিটি দোকানেই উল্লেখ করার মতো নারী ক্রেতাদের উপস্থিতি। রাজধানীর শ্যামলী থেকে নিউমার্কেটের নূর জাহান মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা উম্মে হাবিবা মিমের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবো। পরিবারের সবার জন্য কমবেশি কেনাকাটা করে নিয়ে যাবো। কিছু কিনেছি আরও কেনাকাটা বাকি আছে।’
উত্তরা থেকে নিউমার্কেটের ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ব্যাংকার ইসরাত আমিন জানান, অফিসের চাপ থাকায় ছুটির দিন (শুক্রবার) কেনাকাটা করতে এসেছেন। তবে ভিড় বেশি হওয়ার কারণে পোশাক যাচাই-বাছাই করা কঠিন, যদিও দাম বেশ সাশ্রয়ী বলে তার কাছে মনে হচ্ছে।
সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ঈদের কেনাকাটায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মার্কেটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
জানতে চাইলে নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ( ট্রাফিক) তাওহা ইয়াসীন হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রোজার মাস শুরু আগেই নিউমাকেটের ব্যবসায়ীসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ আলোচনা করেছি। কীভাবে মানুষ যাতায়াত সহজ করা যায় সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে এবং রাত দিন কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের চলাচল সহজ করতে রোজায় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগ পাওয়া ২২ শিক্ষার্থী কাজ করছেন।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাস্তায় কোনো বাধা থাকলে আমরা সেগুলো নিয়মিতভাবে অপসারণ করছি। এছাড়া নিউমার্কেটে আগত যানবাহনের বড় অংশ রিকশার জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) তারেক লতিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেট এলাকায় কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা বা অপরাধ যেন না ঘটে, সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এই এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে আটটি ফুটপাত টুল রয়েছে, ফুটপাট টুলের মাধ্যমে আগত দর্শনার্থীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা নিউমার্কেটে চাঁদাবাজি বা অপরাধের সাথে জড়িত, তাদের নিয়মিত ধরা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন, যাতে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’
এসএইচ/জেবি