রোববার, ৩০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

তিল ধারণের ঠাঁই নেই রংপুরের মার্কেটগুলোতে

রেজাউল করিম জীবন
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ উদযাপনে মাতবে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কেনাকাটার ধুম। সারাদেশের মতো রংপুরেও জমেছে ঈদ কেনাকাটা।

রংপুর নগরীর বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল থেকে ফুটপাতে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। নানা রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে অভিজাত শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলো। অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ভাসমান হকাররাও টেবিল বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। কেউ ছুটছেন শপিংমলে কেউ আবার ফুটপাতের দোকানে।


বিজ্ঞাপন


নগরীর ঘুরে দেখা গেছে, জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ মার্কেট, সুপার মার্কেট, আরএমসি মার্কেট, জামাল মার্কেট, ছালেক মার্কেট, রজনীগন্ধ্যা মার্কেট ছাড়াও ইয়োলো, আম্ব্রেলা, ইনফিনিটি, আড়ং, দর্জিবাড়ি, বন্ড, ডায়মন্ড, বেঙ্গলবস, অঞ্জনসহ শতাধিক অত্যাধুনিক শোরুমগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ক্রেতা আকর্ষণে কেনাকাটা করলেই নিশ্চিত উপহার রাখা হয়েছে মার্কেটগুলোর পক্ষ থেকে।

সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে এসব মার্কেটগুলোতে।

হালের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিটি শোরুমে পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। ভিন্ন ডিজাইনের নতুন কালেকশন এসেছে, বিশেষ করে পাঞ্জাবি, লন-সালওয়ার-কামিজ ও কুর্তিতে দেখা গেছে ভিন্নতা। নামিদামি শপিংমলের শোরুমে শোভা পাচ্ছে হাজার থেকে লাখ টাকা মূল্যের পোশাক।

এবার জামদানি ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, মেয়েদের পাগলু, বিপাশা বসু, জান্নাত-টু, আশিকী-২, জিপসি ৩৫০ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, ছেলেদের কার্গো জিন্স, থাই, ডিসকার্ড-২, সিম ফিট, ফরমাল টি শার্ট ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা, ছোটদের লেহেঙ্গা, মাসাক্কালী, সিঙ্গেল টপ, টপসেট, গেঞ্জিসেট ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা, পাঞ্জাবির মধ্যে বড়দের ছোটদের ধুতি কাতান ৩৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার এবং আকর্ষণীয় শেরওয়ানি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


বাজারে এসেছে ছেলেদের বাহুবলী, বজরঙ্গি ভাইজান ও রইস পাঞ্জাবি। সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা।

এছাড়াও নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় থেকে টাউন হল চত্বর পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে কাপড়, স্যান্ডেল, জুতা, প্যান্ট-শার্ট, থ্রি পিস, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের কাপড়, টুপি, আতরসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা।

eid-photo3

শুধু ওই সড়কের মধ্যে সীমাবদ্ধ না, নগরীর স্টেশন রোড, মেডিকেল মোড়, হাঁড়িপট্টি রোড, সিও বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত কেন্দ্রিক দোকানগুলোতে জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। এসব দোকানে অধিকাংশ ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

একই ছাদের নিচে সব পণ্যের সমাহার খ্যাত রয়েলেটি মেগামলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানবীরুজ্জামান আশরাফী বলেন, ‘এবারের ঈদে খুব বেশি বিক্রি না হলেও মন্দ না। বলা চলে ভালোই হচ্ছে। সত্যিবলতে কি একেক শ্রেণির একেক ধরণের চাহিদা। কেউ ভালো পণ্যে নিতে চান। আবার কেউ স্বল্পমূল্যের মধ্যে পণ্যে নিতে চান। আমরা সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। ওভাবেই সাজিয়েছি রয়েলেটি মেগামল। কেউ কিনতে আসলে ফিরত যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও কেনাকাটার ওপর লটারি রয়েছে। দিনশেষে রাতে লটারি হয়। লটারিতে নিশ্চিত উপহার পান ক্রেতা।’

নগরীর ডিসির মোড়ে গ্রীন ফ্যাশন ও স্পোর্টস শো রুমের ব্যবস্থাপক আবু তাহের জানান, ‘একেবারে নতুন হিসেবে বিক্রি খারাপ হচ্ছে না। ভালোই হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য কেনাকাটায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট থাকায় ক্রেতারা বেশি বেশি ভিজিট করছেন। শো রুমে কোন ক্রেতা প্রবেশ করলেই কিছু কিছু না কিনছেন।

ঈদকে সামনে রেখে এবার অভিজাত বিপণিবিতানের পাশাপাশি ব্র্যান্ডের দোকানে ভালো বিক্রি হয়েছে। নগরীর বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের শোরুম ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যান্ডের শোরুমগুলোতে তেমন বিক্রিতে ঝামেলা নেই। একদাম হওয়ায় পছন্দ হলেই বিক্রি হচ্ছে। শুধু ক্রেতাকে পণ্যটি দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে পারলেই হয়।

এদিকে নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এই ফুটপাতের দোকানগুলোই স্বল্প আয়ের মানুষের যেন শেষ ভরসা। স্বল্পমূল্যের মধ্যে তারা পরিবার পরিজনের কেনাকাটা সম্পন্ন করছেন।

সদর হাসপাতালের সামনের ফুটপাত ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, অনেকে মনে ধারণা, ফুটপাতে মানহীন কাপড় বিক্রি হয়। কিন্তু এ ধারণা একেবারে ঠিক নয়। এখানে সুলভ মূল্যে ভালো মানের কাপড়ও পাওয়া যায়। আমরা অল্প লাভে বিক্রি করি। কেননা আমাদের লাইটিং বিল নেই, দোকান ভাড়া নেই। সমান্য কিছু লাভে কাপড় বিক্রি করলেও চলে। আগে ফুটপাতের দোকানগুলোতে শুধু নিম্নবিত্তরাই আসত। তবে এখন কাপড়ের কোয়ালিটির কারণে অনেক মধ্যবিত্তও কাপড় কিনতে আসেন।

eid_photo5

ফুটপাতের দোকানি মানিক মিয়া বলেন, রোজার শুরু থেকেই বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে অভিজাত শপিংমল ও মার্কেটের তুলনায় আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় অনেক কম। এ কারণে অনেক ভালো মানের পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা বিক্রি করতে পারি। এতে ক্রেতারাও যেমন সন্তুষ্ট হয়, তেমনি আমাদের বিক্রিও ভালো হয়।

জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স কেনাকাটা করতে আসা ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম জানান, কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীসহ নিজের কেনাকাটা শেষ। তবে টুপি, আতর কেনা হয়নি এখনও। দাম নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই বলে জানান তিনি।

আড়ংয়ে পাঞ্জাবি কিনতে আসা সাব্বির হোসেন জানান, প্রতি বছরই আড়ং থেকেই পাঞ্জাবি কেনা হয়। একটা পাঞ্জাবি কেনা হয়েছে। আর একটা পাঞ্জাবি কেনার জন্য দেখছি। পছন্দ হলে কিনব। নইলে চলে যাব আজকের মতো।

আরেক ক্রেতা জানান, আড়ংয়ের পাঞ্জাবিগুলো ভালো ডিজাইনের হয়। আরামদায়কও। তবে দাম তুলনামূলক বেশি।

দিনমুজুর মোর্শেদ আলী জানান, ‘আমরা দিনমুজুর মানুষ। ইচ্ছে করলেও মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারি না। তাই সাধ্যমতো ফুটপাতের দোকানে কম দামে কেনাকানাটা করি প্রতি বছর। এ বছরও কেনাকাটা ফুটপাত থেকে করতেছি। এখনও বাড়ির সবার কেনাকাটা হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে শেষ হবে।’

সামসুল ইসলাম নামে এক হোটেল কর্মী জানান, ‘প্রতি বছর ঈদের আগে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করতে ফুটপাতের দোকানে আসি। ছেলে মেয়েকে নিয়ে এসেছি, তাদের পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করছি।’

আরেক ক্রেতা জানান, ফুটপাতের দোকানে দুই শ থেকে পাঁচ শ টাকার মধ্যে যেকোনো জিনিস কেনা হয়, যা শপিংমলগুলোতে সাধারণত দেড় থেকে দুই হাজার টাকার নিচে পাওয়া যায় না।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, ‘ঈদ কেনাকাটা স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি মার্কেটের সামনে পুলিশ রয়েছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও নগরীতে যাতে কেনাকাটা শেষে নির্বিঘ্নে মানুষ বাসায় পৌঁছতে পারে সেজন্য পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।’

প্রতিনিধি/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর