একসময় সব বয়সের মানুষেরা পাইকারি দরে কাপড় কিনতে যেতেন রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে। কিনতেন পছন্দমত কাপড় চোপড়সহ ঈদ সামগ্রী। ব্যবসাও হতো দোকানীদের বেশ। কিন্তু মার্কেটটি পুড়ে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে ব্যবসায়ীদের। শুধু বঙ্গবাজার নয়, এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের মার্কেটগুলোতেও। বঙ্গবাজারের পাশেই রয়েছে এনেক্স ভবন, সিটি মার্কেটসহ বেশ কিছু খুচরা ও পাইকারি দোকান।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষেও এই মার্কেটে নেই তেমন বেচাকেনা। রোববার (২৩ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেল। কথা হয়, পুড়ে যাওয়া বঙ্গমার্কেটের দোকানের কর্মচারী রুবেলের সঙ্গে। হতাশা আর ক্ষোভের কথা জানান তিনি।
রুবেল বলেন, বঙ্গ মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে আমাদেরও। মার্কেট থাকলে অনেক বেচাকেনা হতো। মাকের্ট পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে গেছে আমাদের কপালও। সারাদিনে যা বিক্রি করি সেটা আগের তুলনায় চারভাগের একভাগ। আমাদের অনেক কষ্ট হয় চলতে। আমরা অনেক কষ্টে আছি। সকালে পুলিশ বসতে দেয় না। বিকেল ৪টার পর দোকান লাগাই। বিকেল ৪টার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। গতবারের ঈদের তুলনায় এবারের বেচাকেনা খুবই কম। বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ায় কাস্টমার সবাই চলে যাচ্ছে পাশের দূরের মার্কেটগুলোতে। নিউ মার্কেট, রাজ্জাক মার্কেট, সিটি মার্কেটসহ দূরের মার্কেটগুলোতে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আগে একটা নাম ছিল বঙ্গবাজার। যে বঙ্গবাজারে গেলে সব কিছু পাব। এখন সেই বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ায় আমাদের এখানে কাস্টমার আসে না। আমি এখানে প্রায় ৫ বছর যাবত কাজ করছি। আর মহাজন ব্যবসা করেন প্রায় ২০ বছর হলো।
একই মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, আমি এখানে ব্যবসা করি প্রায় ২০ বছর ধরে। বিগত দিনের তুলনায় এবারের ঈদ মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কম। ক্রেতা নেই বললেই চলে। বঙ্গমার্কেটে আমার দু’টি দোকান ছিল। দোকান দু’টি পুড়ে যাওয়ায় ফুটপাথে বসে ব্যবসা করি। দোকান পুড়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণও পাইনি। নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবাজার। কাজ তো চলমান। শেষই হয় নাই। শেষ হওয়ার পর হয়তো বরাদ্দ দেবে। আমার মনে হয় দুই বছরেরও বেশি সময় লাগবে এই ভবন নির্মাণ হতে।
বঙ্গ মার্কেটের পাশেই অবস্থিত এনেক্স মার্কেট। এই মার্কেটেরও ব্যবসা ভালো হচ্ছে না বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। মেয়েদের আইটেম নিয়ে বসেন মেহেদী হাসান নামের এক দোকানী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসা মোটামুটি। আমরা পাইকারি বিক্রি করি। ক্রেতা বিগত সময়ের মতোই। তবে পাশের বঙ্গ মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে। অগের মতো ক্রেতা আসছে না এই মার্কেটেও। বঙ্গ মার্কেটের মতো ব্যবসার প্রভাব পড়েছে এই মার্কেটেও।
বিজ্ঞাপন
এনেক্স মার্কেটের আরেক দোকানী হাবিব বসে আছেন বাহারি রঙ-বেরঙের লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি প্রভৃতি নিয়ে। জানতে চাইলে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আল্লাহ যা রিজিকে লিখে রেখেছেন তাই ব্যবসা হচ্ছে। এজন্য বলছি আলহামদুলিল্লাহ।
তবে এই ব্যবসায়ীও একই কথা বললেন। তার মতেও বঙ্গ মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কম আগের তুলনায়। তিনি বলেন, বঙ্গ মার্কেট একটা ব্র্যান্ড। এই বঙ্গ ছিল দেশব্যাপী সুপরিচিত একটি নাম। এক নামেই একে সবাই চিনে। বঙ্গ মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় পুড়েছে ব্যবসায়ীদের কপাল।
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। বঙ্গবাজারে লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে ভবন তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। ১০৬ দশমিক ২৮ শতাংশ জমিতে ১০ তলা ভবনটি চারটি ব্লকে ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের। পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, মহানগর হকার্স মার্কেট এবং আদর্শ হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে এসব দোকান। পুড়ে যাওয়ার আগে এই চারটি মার্কেটে ২ হাজার ৯৬১টি দোকান ছিল। নতুন করে বানানো ভবনে দোকানের সংখ্যা হবে ৩ হাজার ২১৩টি, অর্থাৎ আগের চেয়ে ২৪৪টি বেশি।
এই মার্কেটে সবচেয়ে বেশি দোকান পাবেন বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা, ৯৪৫টি। গুলিস্তান হকার্স মার্কেট ৮৭৯টি, মহানগর হকার্স মার্কেট ৬৬০টি এবং আদর্শ হকার্স মার্কেট ৭২১টি দোকান বরাদ্দ পাবে। ভবনের নিচতলায় ৩৫৯টি দোকান থাকবে। দ্বিতীয় তলায় ৩৭৬টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৬টি, চতুর্থ তলায় ৩৯৫টি, পঞ্চম তলায় ৩৯৩টি, ষষ্ঠ তলায় ৩৯৫টি, সপ্তম তলায় ৩০৫টি, অষ্টম তলায় ৩০৬টি এবং নবম তলায় ২৯৮টি দোকান করা হবে। প্রথম তলা বাদে বাকি ফ্লোরগুলোতে একটি করে খাবারের দোকান রাখা হয়েছে।
এআইএম/এফএ