রোববার, ৩০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

নিম্ন-মধ্যবিত্তের ‘আস্থার ঠিকানা’ নিউমার্কেট

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নিম্ন-মধ্যবিত্তের ‘আস্থার ঠিকানা’ নিউমার্কেট
নিউমার্কেটে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে নগরবাসী। ঈদের কেনাকাটায় ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ যেন পিছিয়ে নেই। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা ছুটছেন ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও বিপণি-বিতানগুলোতে। তবে রাজধানীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের বড় অংশের আস্থার ঠিকানা নিউমার্কেট ও আশপাশের মার্কেট ও ফুটপাত।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ, বিভিন্ন বয়সী মানুষ কেনাকাটা করতে এসেছেন নিউমার্কেট এলাকার বিপণি-বিতানগুলোতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিউমার্কেটে চলছে কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না তারা।


বিজ্ঞাপন


গরমকাল চলে আসায় হালকা-পাতলা আরামদায়ক পোশাকের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। ফুটপাত থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপণি-বিতানে মানভেদে নতুন কাপড় একশ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মার্কেট থেকে বেশি মানুষ ঝুঁকছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। যাদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

ঈদকে কেন্দ্র করে নিউমার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক। বিশেষ করে, ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের দেশি বিদেশি নকশার পোশাকের কালেকশন নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, বাচ্চাদের পোশাক, টি-শার্ট, জিন্স, শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের আগ্রহ বেশি নিউমার্কেটে আসা ক্রেতাদের। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিকস, গহনাসহ নানা প্রসাধনীর চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে।

কম দামে ভালো পণ্যের চাহিদা


বিজ্ঞাপন


নিউমার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম লাভে বেশি বিক্রির নীতি অবলম্বন করছেন তারা। ন্যূনতম ২০০ টাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে। যার দাম দোকানগুলোতে ৭০০ থেকে হাজার টাকার নিচে নয়। ক্রেতাদের চাহিদা কম দামের ভালো মানের পোশাকের দিকে।

New1

নিউমার্কেটের অ্যাপেক্স ও বাটা শোরুম ঘুরে দেখা যায়, একটু ভালো মানের জুতার দাম শুরু হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে। কোনো কোনো জুতা দামভেদে তিন হাজার থেকে চার হাজার বা সাড়ে হাজার টাকা। যা অনেকের নাগালের বাইরে। ফলে ফুটপাতের দোকানে ঝুঁকছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। এছাড়া বাহারি রকমের পোশাক হলে কখনো কখনো দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়।

সীমিত লাভে বেশি বিক্রি

জানতে চাইলে ফুটপাতের ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, দোকানে পণ্য কিনতে গেলে খরচ অনেক বেশি। সেখানে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কারেন্ট বিল যুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের এমন খরচ নেই। আমরা সীমিত লাভে বেশি বিক্রি করি। এতেই পর্যাপ্ত লাভ হয়। সে জন্য কম দামেই পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি করছি।

New2

আরেক ব্যবসায়ী মাহবুব আলম জানান, নিম্ন-মধ্যবিত্ত উভয়ের পছন্দ কম বাজেটে ভালো মানের পণ্য। তাই আমরাও কম বাজেটে সব রকমের পোশাক রেখেছি। তাই ক্রেতাদের কোনো না কোনো জিনিস পছন্দ হচ্ছে আর কিনেও নিচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষ ফুটপাতের দিকে ঝুঁকছেন। আর নিম্ন আর মধ্যবিত্তদের চাহিদা ফুটপাতে।

মার্কেটের পণ্যেরও চাহিদা

তবে বিভিন্ন মার্কেটের ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। নিউমার্কেট এলাকার নুর জাহান মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে রয়েছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। যাদের বেশিরভাগ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা।

জানতে চাইলে নুর জাহান মার্কেটের ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, যতটুকু সম্ভব সীমিত পরিসরে লাভ করে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছি, ক্রেতাদের চাহিদাও রয়েছে। একদিকে যেমন গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বিক্রি, আবার মানুষ কম দামে ভালো মানের পোশাকের দিকে চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের। তবে আমার এখানে নানা শ্রেণি-পেশার ক্রেতা রয়েছে, সবার কথা চিন্তা করেই ঈদের পোশাক বিক্রি করছি।

ক্রেতাদের চাহিদা যেমন

যাত্রাবাড়ী থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল ইসলাম। তার সঙ্গে ঢাকা মেইলের কথা হয় চন্দ্রিমা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। হাসিবুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামে চলে যাবো। সময়ও হাতে বেশি নেই। তাই কেনাকাটা করতে এসেছি। দোকানের ভেতরে অনেক দাম চায়, দামাদামি করে পণ্য কেনা লাগছে। ঠকে যাওয়ার ভয় তো আছেই। আমি চাই মধ্য বাজেটে ভালো পণ্য কিনতে।

New3

গাউছিয়া মার্কেটে আসা রোকেয়া সুলতানা বলেন, এখানে শুরুতে অনেক দাম চায়। গত বছর ঈদের আগে যে পোশাক পাঁচ হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সেই একই মানের পোশাকের দাম একটু বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষেত্রে আবার দ্বিগুণ দাম ধরা হচ্ছে। তবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই কেনাকাটা করছি।

আরেক ক্রেতা শাহিনুল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতে আগেভাগেই পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনতে এসেছি। যাতে সবার সঙ্গে ঈদ ভালো কাটে। মার্কেটে এসে কয়েকটি দোকান ঘুরেছি, ব্যবসায়ীরা বেশি দাম চাচ্ছেন। কিন্তু ঈদে পোশাক তো কিনতেই হবে। তাই যেটা মানান সই দাম মনে হচ্ছে, সেটা কিনছি।

সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দীন ঢাকা মেইলকে বলেন, রমজানের শুরু থেকে নিউমার্কেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের টহল টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। আটটি ফুটপাত টুল বসানো হয়েছে নিউমার্কেটে আসা মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য। মানুষ সেবা গ্রহণও করছেন। ভয়হীনভাবে সবাই নিউমার্কেট এলাকায় ঈদের কেনাকাটা করতে পারছে।

ওসি বলেন, কোনো অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেনাকাটা করতে আসা মানুষের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

এসএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর