মনির হোসেন। রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় আব্দুল আজিজ সড়কের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়।
মে দিবসের সম্পর্কে জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, এই দিবস আমাদের জন্য না। আমাদের সব দিবসই এক। সবদিনই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, যাদের একটি বাড়ি ও গাড়ি আছে, তাদের জন্য শ্রম দিবস। এটা আমাদের জন্য না। আমরা বারো মাস ডিউটি করি। এমনকি ডিউটি করলেও বাড়তি কোনো টাকা দেওয়া হয় না। তাই আমাদের জন্য এই দিবস না।
জীবনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মনির হোসেন বলেন, আমি কয়েক বছর সৌদি আরবে ছিলাম। সেই দেশেও একটি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে মে দিবসে সেই দেশের সবাইকে ছুটি দেওয়া হয়। আর যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের বাড়তি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই দিবসের কোনো মূল্য নেই।
একই এলাকায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বানাথ পাল নামের এক ব্যক্তি। চাকরির জন্য ১২ বছর আগে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করছেন। সর্বশেষ তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এক যুগ ঢাকা শহরে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। মে দিবসে কোনোদিন ছুটি পাইনি। এছাড়া বাড়তি কোনো টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিয়ে করেছি চার বছর হয়েছে। সবাই ছুটিতে বাড়ি গেলেও আমি যেতে পারি না। বিভিন্ন দিবসে কেন বাড়ি যাই না- এমন প্রশ্ন স্ত্রী করলেও কোনো উত্তর দিতে পারি না।
আব্দুল মতিন মিয়া রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের মহল্লায় তিনজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। কিন্তু মে দিবসে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারো কোনো ছুটি নেই।
তিনি আরও বলেন, মে দিবস আসলে সবাই ছুটি পায়। বিভিন্ন সংগঠন শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল-মিটিং করে। কিন্তু আমাদের পাশে কেউ আসে না।
আক্তার হোসেন নামের আরেক নিরাপত্তাকর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, এই দিবস আমাদের মতো দিনমজুরের জন্য না। বরং একদিন কাজ না করলে চাকরি চলে যাবে।
বাংলাদেশে এই দিনটি সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু অনেক শ্রমজীবী মানুষের কাছেই এ দিবস ভিন্ন কোনো অর্থ বহন করে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমে মে দিবস এসেছিল। কিন্তু এখনও শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যে হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে শ্রমিকদের বেতন বাড়ছে না। এমনকি কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা আহত-নিহত হলেও তারা কোনো সহযোগিতা পায় না। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে।
কেআর