আব্দুল আজিজ, বয়স প্রায় ৮৫ বছর। বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার সরৈকান্দী গ্রামে। ছেলেদের পর্যাপ্ত উপার্জন এবং কাজের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অলস সময় কাটাতে নারাজ তিনি। তাইতো প্রায় ৭০ বছর যাবৎ মানুষের বাড়িতে নলকূপ বসানোর কাজ করে যাচ্ছেন আপন মনে।
তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয় বার্ধক্য যেন হার মেনেছে অবলিলায়।
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল আজিজ খুব বেশি পড়াশোনা করেনি। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আব্দুল আজিজ বলেন, যতটুকু মনে পড়ে ক্লাস ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত আমি স্কুলে গিয়েছি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ আমার শরীরে বসন্ত উঠে। বসন্ত উঠা শরীর নিয়ে তো স্কুলে যাওয়া যায় না। বসন্তের জন্য যে স্কুল ছেড়েছি আর কোনো দিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কিছুদিন পর থেকে পাশের গ্রামের এক নলকূপ মিস্ত্রির সঙ্গে নলকূপ দাবানোর কাজে লেগে যান।
বিজ্ঞাপন
আব্দুল আজিজ বলেন, প্রথমে বড়দের সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। বয়সে ছোট থাকায় প্রায় ৮/১০ বছর সহকারী হিসেবে কাজ করি। এরপর নিজে মিস্ত্রী হিয়ে যাই।
তিনি আরও জানান, নলকূপ খনন হলো দলবদ্ধ কাজ। ৪ থেকে ৫ জন মিলে হয় একটি দল । এ রকম দলে প্রায় ৭০ বছর ধরে কাজ করতেছি নিয়মিত।
সংসার জীবনে আব্দুল আজিজের তিন ছেলে এক মেয়ে। দুই ছেলে কর্মজীবী। এক ছেলে কাজ করেন বাড়িতে। মেয়েটা বিবাহিতা। থাকেন স্বামীর বাড়িতে। জীবনের শুরুতে সংসারের খরচ যোগাতে কাজ করতেন তিনি। আর এখন কাজ করেন সময় কাটানোর জন্য। কারণ অবসর থাকা তার ভালো লাগে না।
নলকূপের কাজ না থাকলে জমি খেতির কাজে লেগে থাকেন তিনি। নিজের জমিতে শ্রম দিতে যত্ন নিতে ভালো লাগে তার। এক কথায় হাত গুটিয়ে অকর্মা বসে থাকতে রাজী নন আব্দুল আজিজ।
কথা বলার সময় আ: আজিজ জানান, ‘আইজ্জাও এক কানি ক্ষেতের কুলা কুবাইছি আমি’।
আব্দুল আজিজ আরও জানান, তার প্রথম জীবনের কাজের সঙ্গীদের কেউই বেঁচে নেই এখন। পরে কাজে নামা সঙ্গীদেরও অনেকেই এ পেশায় নেই এখন। ভদ্রলোক হয়ে গেছেন তারা এখন সবাই। তিনি জানান, যতোদিন শরীরে সামর্থ্যে আছে ততোদিন এ কাজে লেগে থাকার ইচ্ছে আছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এজে