রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গণস্বাস্থ্য কী, কীভাবে কাজ করে এই জনহিতকর ট্রাস্ট?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০১:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

গণস্বাস্থ্য কী, কীভাবে কাজ করে এই জনহিতকর ট্রাস্ট?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নাম দুইটি একে অপরের পরিপূরক। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে জফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান আলোচনায়ও সবার আগে আসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের সুপরিচিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, যেটির কর্মসূচির ভিত্তি স্বাস্থ্যসেবার উপর নির্ভরশীল। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠানটি প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি তার সমন্বিত সমাজস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা বা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক লাভ করে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি জনহিতকর ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের প্রধান দুটি লক্ষ্য হচ্ছে, দরিদ্র মানুষের উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে এবং মেয়েদের অগ্রগতি হলে দেশের অগ্রগতি হবে। বর্তমানে সারাদেশে গণস্বাস্থ্যের  ৪০টি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এগুলো সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক প্রশংসিতও হয়েছে। এর অধিনে রয়েছে ৭টি হাসপাতাল, ডেন্টাল কলেজ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশনস, মাসিক গণস্বাস্থ্য ম্যাগাজিন, বেসিক কেমিক্যাল কারখানা (দেশের সবচেয়ে বড় প্যারাসিটামল কাঁচামাল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান) গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যান্টিবায়োটিকের কাঁচামালের ফ্যাক্টরি। এছাড়াও সারাদেশে ৪৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেয়েদের ড্রাইভিং স্কুল, ভেটেরিনারি ফার্ম, রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫টা মেডিকেল ক্যাম্প, এগ্রিকালচারাল ফার্ম, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ফার্ম রয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


গণস্বাস্থ্যের মুখপত্র হিসেবে কাজ করে ‘মাসিক গণস্বাস্থ্য’। ১৯৮০ সাল থেকে অদ্যাবধি এটি সক্রিয় আছে। বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যসূত্র-সমন্বিত খবরা-খবরসহ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রকাশিত হয় পত্রিকাটিতে। এর সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সম্পাদক বজলুর রহিম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এর সকল কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। 

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র
স্বাধীনতা ঘোষণায় পর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনে বসবাসরত এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) গঠন করে। যার সভাপতি ছিলেন ডা. এ এইচ সায়েদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এম এ মোবিন ও জাফরুল্লাহকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ভারতে পাঠায়। তারা বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেন। এই হাসপাতালের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম। যিনি তার বিশেষ অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধীতে ভূষিত হন। 

স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল ঢাকার ইস্কাটন সড়কে পুনঃস্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের এপ্রিলে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রূপে গড়ে তোলার জন্য ‘চল গ্রামে যাই’ স্লোগান ও উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই নাম দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই হাসপাতালটি মোট ২৮ একর জমির উপর স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২৩ একর জাতির পিতা সরকারি খাস জমি থেকে দান করেন। বাকি অংশ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু ডা. মাহমুদুর রহমানের মা জহুরা বেগম দান করেন। 


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্যখাতে গণস্বাস্থ্যের অবদান ও প্রাপ্তি
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ডা. জফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশের কল্যাণে কাজ করতে থাকে। সরাদেশে স্বল্প মূল্যে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সার্বাধিক যে বিষয়ে অবদান রাখছে তা হলো কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা। বাংলাদেশেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ডায়ালাইসিস সেন্টার। ঢাকার ধানমন্ডিতে স্থাপিত এই সেন্টারে ৩০০টি বেড রয়েছে। আর ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে ১৩৫টি। 

করোনা মহামারিকালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১৯ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কিট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রি-অ্যাজেন্ট আমদানির সরকারি অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কাছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

১৯৭৭ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বিত সমাজস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ম্যাগসাসে পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে রাইট লাইভহুড পুরস্কার এবং ২০০২ সালে বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো পুরস্কার লাভ করে।

এমএইচ/একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর