মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ। খানিক বাদেই ঘোষণা করা হবে সেই বহুল প্রতিক্ষীত রায়। এই রায়ে যে শাস্তিই হোক, আপিল করার সুযোগ পাবেন না সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামিম।
বিজ্ঞাপন
পলাতক আসামিদের বিষয়ে কী হবে বা আইনের বিধান কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাদের সাজা হলে আপিল করার সুযোগ অবশ্যই থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে (সিআরপিসি) জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর বা শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও রায় প্রদানের ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও আলাদা কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও এর কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। অতএব, আসামি নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন, তার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করেই শাস্তি দেওয়া হবে।’
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যাসহ পাঁচ অপরাধে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, তৎকালীন পুলিশ প্রধান আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে খানিক বাদেই।
এ মামলার রায় দেবেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বিজ্ঞাপন
নিয়ম অনুযায়ী, দণ্ডপ্রাপ্ত গ্রেফতার আসামিরা রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল আবেদন করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষও আপিল বিভাগে যেতে পারবে। তবে শেখ হাসিনা ও কামালের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ থাকছে না। কারণ, তারা পলাতক।
মামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ পেয়েছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয় এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
প্রসিকিউশনের যে পাঁচ অভিযোগ
১. ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানির অভিযোগ:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনের এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। পরে তার নির্দেশ-উৎসাহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীরা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়।
২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে: আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা—এমন অভিযোগ প্রসিকিউশনের। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন বলে দাবি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিওও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩. রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা ও তথ্য গোপন
১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে— নির্দেশদাতাদের মধ্যে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুন ছিলেন। পরে চারবার ময়নাতদন্ত পরিবর্তন এবং সহপাঠীদের আসামি করে পাল্টা মামলা করার বিষয়েও তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়।
৪. চানখাঁরপুলে আনাসসহ ছয়জনকে হত্যা
৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ চলাকালে চানখাঁরপুলে ছাত্রনেতা শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি— সুপিরিয়র কমান্ড হিসেবে এই হত্যার নির্দেশ আসামিরাই দিয়েছিলেন।
৫. আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগ
৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা আড়াল করার অভিযোগ রয়েছে। নির্দেশদাতাদের তালিকায় শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এমআর/এএইচ








































































