শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ হাসিনার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

মানবতাবিরোধী অপরাধ: হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণা করা হবে আজ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সোমবার সকাল ১১টায় রায় ঘোষণার জন্য বসবেন।


বিজ্ঞাপন


মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গণহত্যার মতো অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি রাজসাক্ষী হিসেবে অপরাধ স্বীকার করে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্য দুইজন পলাতক। এর মধ্যে শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান।

আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর প্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচণা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।


বিজ্ঞাপন


দ্বিতীয় অভিযোগ: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। এর আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চাঁনখারপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে হত্যার আগুনে পোড়ানোর ঘটনায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় আন্দোলনকারী, আহত, প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও–ভিডিও, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলিসহ নানা আলামত।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১২ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর