শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফেব্রুয়ারি এলেই ‘আলোচনায় আসে’ শহীদ মিনার

এস এম শাহাদাত হোসেন অনু
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেব্রুয়ারি এলেই ‘আলোচনায় আসে’ শহীদ মিনার

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। এই মাস এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে চলে নানা ধরনের আয়োজন, আলোচনা, সমালোচনা। তার সঙ্গে পরিচর্যা শুরু হয় শহীদ মিনারগুলোর। অথচ বছরের অন্যান্য সময় অযত্ন, অবহেলা পড়ে থাকে বাঙালির গর্ব, অহঙ্কার, জাতীয়তার প্রতীক শহীদ মিনার। শুধু তাই নয়, বছরের বাকি ১১ মাস শহীদ মিনারের বেদিতে লাকড়ি, কাপড় শুকানো থেকে শুরু সব কাজই চলে।

পুরান ঢাকার পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদ্যালয়টি ঢাকা শহরে স্থাপিত দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয়। দেশবরেণ্যদের অনেকেই পোগোজ স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। সময়ের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটির সেই ঐতিহ্য এখন অনেকটাই ম্লান। জরাজীর্ণ অবকাঠামোর সঙ্গে মলিনতায় ছাপ পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারেও।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারের বেদির একপাশে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জুতা পায়ে বসে খোশগল্প করছে। আর বেদিতে বাঁশ, লাকড়ি শুকাতে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। শহীদ মিনারকে নিজের গৃহস্থালি কাজকর্মের স্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন পাশে থাকা কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি। বছরের অন্য সময় কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শিক্ষকদের নিয়ে বসবো। আশা করি শহীদ মিনারের যথোপযুক্ত সম্মান রাখতে আমরা পারব।

পুরান ঢাকার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ মিনারেও একই চিত্র। ফেব্রুয়ারি এলেই কেবল পরিষ্কার করা হয় এই শহীদ মিনার।

শহীদ মিনারের কিছু অংশের টাইলস ভেঙ্গে গেছে। মিনারের চারপাশে অপরিষ্কার হয়ে আছে। চারপাশে স্টিলের রেলিংগুলোতে ধরেছে মরিচা। দীর্ঘদিন কোনো যত্ন না নেওয়ায় মিনারের সাদা রং ওঠে কালো হয়ে গেছে। এ ছাড়া টাইলসে জমেছে শ্যাওলার আস্তরণ।


বিজ্ঞাপন


শহীদ মিনারের পবিত্র রক্ষায় কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কাউকে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অনেকেই জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে বসে আড্ডা দেয়। অনেক দর্শনার্থীও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসে জুতা পায়ে উঠে যায়।

21_Feb--Clean--Anu--Inner--OK

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক স্মৃতি পরিষদের উদ্যেগে বেশ কয়েকটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে শহীদ মিনারের শিষ্টাচার মেনে চলার অনুরোধ জানানো হলেও কাউকে তা মেনে চলতে দেখা যায়নি।

এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা সবার দায়িত্ব। আমাদের দেশপ্রেমের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ শহীদ মিনারের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা। শুধু ভাষার মাসেই নয়, সবসময় শহীদ মিনার পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। শহীদ মিনার সবসময় পরিষ্কার রাখতে প্রশাসনের সুনজর প্রত্যাশা করছি।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, ভাষার মাস আসলেই আমরা শহীদ মিনারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তা করি। বছর জুড়ে এই শহীদ মিনার নিয়ে আমাদের ভাবনা থাকে না। সকলের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পরিষ্কার রাখা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, শহীদ মিনার আমাদের সবার। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবারই এটা পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। আমাকে বলা হয়েছে সবসময় যেন এসবের খেয়াল রাখি। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করে যা ঠিক নয়। শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবারই দায়িত্ব।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর