শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

পাঁচ নারীর কর্মসংস্থান করেছেন স্বামী পরিত্যক্তা বিলকিস

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

পাঁচ নারীর কর্মসংস্থান করেছেন স্বামী পরিত্যক্তা বিলকিস

দুই ছেলে আর এক মেয়েসহ বিলকিসকে ফেলে রেখে অন্য নারীকে নিয়ে পালিয়ে যান স্বামী জাহিনুর। স্বামীর ব্যবসা ছিল নারিকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাত করে লেপ তোষকের দোকানে বিক্রি করা। স্বামী চলে যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন বিলকিস। 

সংসারের পাশাপাশি তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেন ৫০ হাজার টাকা। নিজেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারিকেলের ছোবড়া কিনে আনেন। এরপর মেশিনে এবং হাতে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যবসা করে তিনি বাড়ি করেছেন এবং মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


শুধু তাই নয় ব্যবসার পরিধি বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। বিলকিস বেগম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আরও ৫ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীর কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন তার নারিকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায়। তারা দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে সেখানে কাজ করেন।

বগুড়া শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আকাশ তারা (ধুমা পাড়া) এলাকায় বসবাস করেন বিলকিস বেগম। মহাসড়কের পার্শ্বে ৯ শতাংশ জমি ১০ হাজার  টাকা বাৎসরিক লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন নারিকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা ও শুকনো নারিকেল সংগ্রহ করেন। ১শ নারিকেল ১৫ থেকে ১৬শ টাকা দরে কিনে আনেন। এরপর শ্রমিকদের দ্বারা গড়ে ১ হাজার নারিকেলের ছোবড়া ছাড়াতে খরচ হয় ৫শ থেকে ৬ শ টাকা। ছোবা ছাড়ানো শেষে মেশিনের সাহায্যে সেগুলো মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় জাজিম, সোফা, শো-পিচসহ বিভিন্ন জিনিস। নারিকেলের ছোবড়ার তোষক, অর্কিড গাছের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করেন বাগানিরা। 

বিলকিস বেগম জানান, শহরের বিভিন্ন আড়ৎ থেকে নারিকেলের ছোবড়া কিনে আনেন। এরপর মেশিনে কেটে টুকরো করে দেন তিনি নিজেই। এরপর অন্য নারীরা হাত দিয়ে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন। প্রক্রিয়াজাত করার পর এসব ছোবড়া বস্তায় ভরে ১৬০০ টাকা মন দরে বিক্রি করে লেপ তোষকের দোকানে। এছারাও ছাড়াও বিভিন্ন ফার্নিচারের দোকানে।

তিনি বলেন, তোষক তৈরি ছাড়াও সোফা সেট, তৈরির কাজে ব্যবহার হয় এসব নারিকেলের ছোবড়া। তবে শহরে দিন দিন নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার কমলেও গ্রামে এর চাহিদা রয়েছে অনেক। বর্তমানে অনেকেই এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। নারিকেলের ছোবড়া সারা বছর চলে না, বছরে ঈদ ও পূজায়  এর সিজন থাকে। এ সময় ভালো চলে এবং শ্রমিকদের ব্যস্ততা তখন বেড়ে যায়। তার এ কাজে ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করে। তারা নারিকেল সংগ্রহ থেকে ছোবড়া বাজারজাতকরণ পর্যন্ত কাজ করে।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ৫০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করা ব্যবসায় তার এখন পুঁজি ৬ লাখ টাকা। সংসারের খরচ ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিকের বেতন দিয়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন বিলকিস বেগম।

তার কারখানায় কাজ করেন খোদেজা বেওয়া। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করে। তিনি এই কারখানায় কাজ করে নিজের খরচ চালান। আরেক নারী আঙ্গুর বিবির স্বামী মুকুল মিয়া ২য় বিয়ে করে বসবাস করেন শহরে। তার খবর রাখে না ছেলেরাও। বাধ্য হয়ে তিনি নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করেন। এরকম ৫ জন নারীর কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন বিলকিস বেগম।

তিনি বলেন, আমার মতো যে সকল নারীদের স্বামী নেই, তাদেরকে কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ব্যবসার পরিধি বাড়লে আরো নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।

বিলকিস বলেন, নারী দিবস কি বুঝি না। জীবন যুদ্ধ করে চলছে প্রতিদিন। এই সব দিবস টিবস আামাদের মতো নারীদের জন্য নয়। খেটে খেলে ভাত জুটবে, না খাটলে নাই। তাই এই দিবস-টিবসের কোনো দাম আমার কাছে নাই।

বগুড়া শহরের কানুছগাড়ি এলাকার সাদমান ফার্নিচারের মালিক  কান্চন বলেন, ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন কোয়ালিটির সোফা তৈরি করে থাকি। নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে আমরা সোফার গদি বানিয়ে থাকি। এই সোফাগুলোর দাম ফোম ও তুলা দিয়ে তৈরি সোফার চেয়ে কিছুটা কম হওয়ায় আমরা কম দামে সোফা বিক্রি করতে পারি।

বগুড়া শহরের মাটিডালির ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারির মালিক মিতু বলেন, আমরা নারিকেলের ছোবড়ার তোষক ৪০ কেজির বস্তা ২০০ টাকায় কিনে থাকি। এটি গাছের জন্য খুব উপকারি। বিশেষ করে অর্কিড গাছের জন্য এই নারিকেল ছোবলার তোষ (কোকোপিট) অনেক ভালো কাজ থাকে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর