শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

পুরুষের মতই পাথর ভাঙে হাজারো নারী, মজুরিতে বৈষম্য

এম মোবারক হোসেন
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

পুরুষের মতই পাথর ভাঙে হাজারো নারী, মজুরিতে বৈষম্য
ছবি: ঢাকা মেইল

বড় রকমের মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের হাজারো নারী পাথর শ্রমিক। অথচ সংসারে অর্থনৈতিক অবদানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরের কাজ সেরে নারী জীবিকার জন্য মাঠে নেমে পড়েন পুরুষের পাশাপাশি। কিন্তু মজুরির বেলায় প্রায় সময় ঘরে-বাইরে নিগৃহীত হচ্ছেন তারা।

এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই কম মজুরিতেই পাথর ভাঙার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকেন। তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত তবুও কাজ হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না।


বিজ্ঞাপন


বাংলাবান্ধা ও মহানন্দা নদীর উত্তোলন করা পাথরের সাইডে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজ করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত এই কাজ করে একজন মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

ponchogar

জানা গেছে, দ্রব্যের মূল্য ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় সংসারের যোগান দিতে পঞ্চগড়ে দিন দিন নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংসারের চাহিদা ও ভরণ-পোষণের জন্য ঘরের কাজ সেরে জীবিকার তাগিদে নারীরা নেমে পড়েন মাঠে-ঘাটে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে ঘরে-বাইরে প্রায়শ নিগৃহীত হচ্ছেন তারা। এমনই হাজারো পাথর ও চা নারী শ্রমিক বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের কষ্টের কথা কেউ শোনে না। প্রায় ১০ হাজার নারী শ্রমিক পাথর ভাঙা, প্রক্রিয়াকরণ, সমতলের চা বাগানে পরিচর্যার কাজে, চা-পাতা সংগ্রহ, চা কারখানায়, ভবন নির্মাণে ও কৃষি কাজে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে পঞ্চগড় জেলাকে এগিয়ে নিতে কাজ করেই যাচ্ছেন। এখনকার নারী শ্রমিকরা প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে কাজে অংশ নিচ্ছেন। তবে পাথর সংশ্লিষ্ট কাজে কম মজুরি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে জানিয়েছেন নারী শ্রমিকরা।

এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকরা পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। এতে সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এক সময় নারীরা শুধুই ঘর গৃহস্থালির কাজ করত।


বিজ্ঞাপন


ponchogar

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজে অংশ নিচ্ছেন নারী শ্রমিকেরা। তবে তাদের কম মজুরি দেওয়া হয়।

সরে জমিনে গিয়ে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০ হাজার নারী শ্রমিক পাথর ভাঙা, প্রকৃয়াকরণ, সমতলের চা বাগানে পরিচর্যার কাজে, চা-পাতা সংগ্রহ, চা কারখানায়, ভবন নির্মাণে ও কৃষি কাজে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে পঞ্চগড় জেলাকে এগিয়ে নিতে কাজ করেই যাচ্ছেন। এখনকার নারী শ্রমিকরা প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে কাজে অংশ নিচ্ছেন। তবে কম মজুরি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে অনেকে।

বিশেষ করে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বয়ে আসা ১৭ কি.মি. মহানন্দা নদীর বিভিন্ন পাথর সাইটে কাজ করেন কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

ponchogar

তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকার পাথর ভাঙা শ্রমিক রেহানা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ৯ বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করছি। ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে সংসারে। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর হলো। এক মেয়েকে কোনো রকমে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলে-মেয়ে দুটো লেখাপড়া করছে। অভাবের সংসারের চাহিদা মেটাতে অল্প মজুরি দিয়ে জীবন নির্বাহ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আগে সবারই মজুরি কম ছিল। তখনও নারী-পুরুষের মধ্যে মজুরি পার্থক্য ছিল। এখন মজুরি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আমরা পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেও মজুরি কম পাচ্ছি।

পাথর ভাঙার কাজে নিয়োজিত ফিরোজা নামে নারী শ্রমিক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা পাথর ভাঙার মেশিনে কাজ করছি। সারা দিন সমান কাজ করেও আমাদের মজুরি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা আর পুরুষদের মজুরি ৫০০ টাকা ৫৫০ টাকা।

ponchogar

এদিকে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজে অংশ নিচ্ছেন নারী শ্রমিকেরা। তবে তাদের কম মজুরি দেওয়া হয়।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় একেকজন পুরুষ পাথরশ্রমিক পাথর ভাঙা মেশিনে কাজ করে প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ থেকে ৪৫০ টাকা মজুরি পান, কিন্তু নারী শ্রমিকরা ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পান।

স্থলবন্দর এলাকার পাথর ভাঙা শ্রমিক আমেনা বেগম বলেন, আমি ৪ থেকে ৫ বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করছি। এর আগে সবারই মজুরি কম ছিল। তখনও আমাদের নারী–পুরুষের মধ্যে মজুরি পার্থক্য ছিল। এখন মজুরি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু আমরা পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেও মজুরি কম পাচ্ছি।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় একেকজন পুরুষ পাথর শ্রমিক পাথর ভাঙা মেশিনে কাজ করে প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করে ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০টাকা মজুরি পাচ্ছেন। কিন্তু নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন মাত্র ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।

পাথর ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, মহানন্দা নদীর পাথর কমে য়াওয়ায় পাথর ভাঙার কাজ কোনোরকমে চলছে। উপায় নেই কারণ পুরুষরা যে কাজটি খুব তাড়াতারি করতে পারে সেই তুলনায় নারীরা ওই কাজ বেশি সময় নিয়ে করে। পুরুষ শ্রমিকরা বেশি পরিশ্রম করে থাকে। বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী পাথর শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়া হয়ে থাকে।

ponchogar

পঞ্চগড় জেলা নারী ফোরামের সভাপতি ও উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাজিয়া সুলতানা বলেন, নারী-পুরুষ সমন্বয়ে কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে পাথরের ক্র্যাশিং সাইডগুলোতে নারীর শ্রমিক সংখ্যা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি।

নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পুরুষ শ্রমিকরা ভারি কাজগুলো করে, তাই তাদের বেতন বেশি। কিন্তু নারী শ্রমিকরা শুধু দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন। সে হিসেবে মজুরি দেওয়ার সময় নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আমরা চাই, এই ধরনের মানসিকতা থেকে সমাজ মুক্তি পাক।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, পাথর শিল্পে নারী-পুরুষের মধ্যে আমরা একটা প্রার্থক্য লক্ষ্য করি। পুরুষ শ্রমিকরা যে মজুরি পেয়ে থাকেন নারী শ্রমিকরা তার থেকে মজুরি কম পেয়ে থাকেন। আমি মনে করি এ ধরনের প্রার্থক্য থাকা উচিত না। কারণ একজন নারী শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকের মতোই সমানভাবে কাজ করে। তাহলে সমান মজুরি পাওয়ার হক তাদের। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পাথর সংশ্লিষ্ট ক্যাশিং মালিকরা রয়েছেন তারা এই বৈষম্য কমাবেন এবং বা প্রার্থক্যটা সমান রাখবেন।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর