শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘নারী দিবস দিয়ে কী হবে, কর্ম করেই খেতে হবে’

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘নারী দিবস দিয়ে কী হবে, কর্ম করেই খেতে হবে’
রঙ্গিলা বেগম (৩৫)

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১০টা ছুঁইছুঁই। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা সেরে ঘরে ফিরতে তাড়াহুড়ো সকলের। ট্রেন কিংবা বাসের দূরপাল্লার যাত্রীদেরও দম নেওয়ার সময় যেন নেই বললেই চলে।

এমন সময়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে গাড়ি পার্কিং পয়েন্টে বসে ছিলেন রঙ্গিলা বেগম (৩৫)। সবাই যখন আগেভাগে বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত, তখন কিছু শাক-সবজি নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় তিনি। সবুজ-শাক, কচু, কলার মগজ আর লেবু বিক্রির জন্য নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে এসেছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর এলাকার বাসিন্দা রঙ্গিলা বেগম। ট্রেনে চড়ে রাজশাহীতে শাক-সবজি এসে পরদিন নগরীর সাগরপাড়ায় রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করেন তিনি। এতে যা লাভ হয় তাতেই কোনো রকম সংসার চলে তাদের। পেট চালানোর তাগিদে দর্জির কাজের পাশাপাশি সবজি বিক্রি করেন তিনি।

রঙ্গিলা ঢাকা মেইলকে জানান, তার বয়স যখন পাঁচ দিন, তখনই অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন তার বাবা। সেই থেকে ভরণপোষণ তো দূরের কথা কোনো খোঁজ খবরই রাখেননি জন্মদাতা বাবা।

ronggila

২০০৭ সালে নওগাঁর রাণীনগরের এক ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। ভাগ্যের নির্মমতায় নেশাখোর স্বামী কপালে জোটে তার। বিয়ের আগে থেকেই নেশা করতেন তিনি। বিয়ের পরও সেই নেশা বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন করতে থাকেন নিয়মিতই। নেশার অর্থ জোগাতে মাত্রা ছাড়িয়ে যায় শারীরিক নির্যাতন। কানের দুল বিক্রি বিক্রি করতে টেনে নিতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন দুই কানেরই কিছু অংশ। মারধরের এক পর্যায়ে ভেঙে যায় বাম হাতটিও। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে বলেও নিস্তার মেলেনি রঙ্গিলার। নানা উদ্যোগ নিয়েও সমাধান করতে পারেননি তারা। স্বামীর অকথ্য ভাষার গালিগালাজের কাছে হেরে গিয়ে বিচ্ছেদের পরামর্শ দেন রঙ্গিলাকে। পরে গত দুই বছর ধরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে এসেছেন মায়ের কাছে।


বিজ্ঞাপন


রঙ্গিলা বলেন, মাস তিনেক আগে স্বামীকে তালাক দিয়েছি। বর্তমানে মা আর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই আমার সংসার। পারিবারিক নানা সমস্যা আর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছেলেকেও খুব বেশি লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। এলাকার বাজারে দিনমজুরির ভিত্তিতে কাজ শিখছে সে।

ronggila

মায়ের অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মায়ের বুকের সমস্যা চলছে। কিন্তু চিকিৎসা তো করাতে পারি না, টাকা পয়সা নেই, যে দু-টাকা পাই খেতেই চলে যায়। আর সবজি বিক্রির কাজও অনেক কষ্টের। নারী হিসেবে এসব জিনিসপত্র টানতে খুব ঝামেলা হয়। তবুও করতে হয়, জীবন যে চলবে না কাজ না করলে।

নারী হওয়ায় কোথাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে যখন শ্রমিক বা দিনমজুরের কাজ করতে যেতাম তখন অনেকে অনেক কথা বলতো। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেও কম দিতো। কাউকে কিছু বলেও সমাধান পাইনি। শেষে দর্জির কাজ আর সবজি বিক্রির পথ বেছে নিয়েছি।

নারী দিবস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব নারী দিবস দিয়ে কি হবে? আমাদের চাওয়া কে পূরণ করবে? কর্ম করেই খেতে হবে। নারী দিবসের চিন্তা করে কি হবে? যারা ভালো মানুষ আছে, অনেককে সাহায্য-সহযোগিতা করেন তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগই পাবো না আমরা। তাই দু-বেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারলেই বেশি। এর বেশি চাওয়া নেই।’

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর