শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘নারী দিবস কী বুঝি না, মাছ কেটেই সংসার চালাই’

সুমন আলী
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

‘নারী দিবস কী বুঝি না, মাছ কেটেই সংসার চালাই’
ছবি: ঢাকা মেইল

নারী দিবস-টিবস কি জিনিস বুঝি না। আমাদের মতো গরীব মানুষের এগুলা কিছু নাই। প্রতিদিন মাছ কাটি। এই মাছ কেটেই কোনো রকম সংসার চলে। এটাই রুটি-রুজি।

কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁ শহরের চকদেব জন-কল্যাণ এলাকার ছামেনা বিবি (৪৫)। প্রায় ৩ বছর ধরে সদর উপজেলার সামনে (সিও অফিস) বাজারের রাস্তার পাশে মাছ কাটার কাজ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য ৫ জন। ছেলেরা যে যার মত করে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। মেয়েকেও দিয়েছেন বিয়ে। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় সেইভাবে কোনো কাজ করতে না পারায় সংসারের অভাব অনটন দূর করতেই তিনি এ কাজ করেন।

মাছ কাটতে কাটতে ছামেনা বিবি বলেন, বাবারে, তোমার চাচা তিন বছর অসুস্থ হয়ে বিছনায় পড়ে ছিল। তখন সংসার চালানোর জন্য মাছ কাটার কাজ শুরু করি। প্রতিদিন সকালে আসি দুপুরে বাড়ি যাই। এ থেকে যা পাই তা দিয়ে তোমার চাচার ওষুধপাতি কিনি, সংসারের খরচ চালাই।

প্রতিদিন কেমন টাকা আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ বেশি হলে একটু বেশি টাকা পাই। তানা হলে কম। কোনদিন ১৫০, কোনদিন ২০০ আবার কোনদিন ২৫০ টাকাও পান। আবার কোনদিন ৫০ টাকা নিয়েও বাড়ি যেতে হয়।

naogaon


বিজ্ঞাপন


এখন আপনার স্বামী কি করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তোমার চাচা এখন রিকশা চালায়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় সেইভাবে রিকশা চালাতে পারে না। রিকশা চালিয়ে যে টাকা পায় তা ভাড়া দিতেই সব চলে যায়। তার একার আয়ে সংসার চলে না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। তারপর জামা কাপড়, ওষুধের খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। এই কাজ না করলে সংসার চলবে না বাপ। সরকারিভাবে কেউ কোনো সহায়তাও করেন না। এই বয়সে রাস্তার ধারে বসে কাজ করি, ভালোও লাগে না।

এলাকার বাসিন্দা মো. ছবির শেখ বলেন, স্ত্রী ও তিনি চাকরিজীবী। প্রতিদিন সময়মতো কাজে যেতে হয়। বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো কেটেকুটে প্রস্তুত করতে সময় লাগে। তাই বাজার থেকেই সেগুলো কাটিয়ে নিয়ে যান। বাজার থেকে তিনি কই মাছ কিনেছেন। সেগুলো কাটাচ্ছিলেন আজ সকালে।

মাছ কাটাতে আসা কর্মজীবী নারী জাকিয়া সুলতানা বলেন, এসব কাজ অনেকে ছোট করে দেখেন। কিন্তু তারা না থাকলে আমাদের আরও ভোগান্তি পোহাতে হতো। অফিস শেষ করে বাড়ি গিয়ে মাছ কাটার আর ধৈর্য থাকে না। তাই মাছ কিনে এই আপার কাছে মাছ কাটিয়ে নেই।

naogaon

বাজারে আসা শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন সুমন জানান, আমরা মেসে থাকি। মেসের খালা মাছ কাটতে চান না। তাই নিয়মিত মাছ কেটে নেই। অল্প খরচে সুন্দরভাবে মাছ কাটা যায়।

তবে মাছ কাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ জানিয়ে ছামেনা বিবি বলেন, মাছের গা তো পিচ্ছিল থাকে। তাই কৌশল না জানলে কাটা কষ্টকর। কাটতে গেলে সরে যেতে পারে, বটি হাতে লেগে কেটে যেতে পারে। অনেক সময়ই হাত কেটে যায়। রক্তও পড়ে। গরিব মানুষ জন্য চিকিৎসাও তেমন করাতে পারি না। হাত কাটলে পানি দিয়ে ধুয়ে, থুতু লাগিয়ে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখি। এমনি ভাল হয়ে যায়।

এভাবেই ময়লা-আবর্জনা ও ঝুঁকি সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধে টিকে থেকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন ছামেনা বিবি।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর