শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফেন্সির দুই পা থেকেও নেই, দুহাতে জয় করেছেন প্রতিবন্ধী জীবন

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেন্সির দুই পা থেকেও নেই, দুহাতে জয় করেছেন প্রতিবন্ধী জীবন

দুই পায়ে শক্তি নেই। চলাফেরা করতে পারেন না। ভিক্ষাবৃত্তিও করেননি। অন্যের কাছে হাত পেতে জীবন না চালিয়ে জালি টুপি বুনে সংসার চালাচ্ছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বাসিন্দা মর্জিনা খাতুন ফেন্সি (৪২)। প্রতিবন্ধী নারীরা যে সমাজের বোঝা নয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। প্রতিবন্ধীতাকে জয় করা সংগ্রামী নারী ফেন্সির জীবন থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সেরুয়া বটতলা থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমদিকে নওদাপাড়া গ্রাম। এ গ্রামেই বসবাস করেন ফেন্সি। ৫ ভাই ৬ বোনের বড় পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। ফলে ৪র্থ শ্রেণির গন্ডিই পার হতে পারেনি তিনি। বয়স যখন ৮ কি ৯ বছর। তখন জ্বরে পড়েন ফেন্সি। কয়েক দিনের টানা জ্বরে দুই পা অবশ হতে থাকে। অভাবী সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সৈয়দা মাহমুদা খাতুন দম্পতি মেয়ের ততটা চিকিৎসা করাতে পারেননি। এর কয়েক বছর পর মেয়েকে বিয়ে দেন তারা। স্বামী নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল ফেন্সির সংসার। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ফেন্সির সংসারে নেমে আসে সীমাহীন অভাব। অভাবের কারণে ফেন্সিকে রেখে সংসার ছেড়ে পালিয়ে যান তার স্বামীও।


বিজ্ঞাপন


দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসারের হাল ছাড়েনি তিনি। নামেনি ভিক্ষাবৃত্তি পেশায়। বরং, নিজের দুই হাতকে কাজে লাগিয়ে জালি টুপি বুনতে শুরু করেন তিনি। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে চলে তার সংসার ও দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপুরে ফেন্সির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় টুপি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তার সার্বিক জীবন নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের। ফেন্সি বলেন, ছোটবেলায় অসুস্থ হয়ে দুই পায়ের শক্তি হারিয়েছি। স্বামীও চলে গেছে, সংসার দেখার মতো কেউ ছিল না। ভিক্ষাবৃত্তিতে নামব এটাতেও সায় দেয়নি মন। তখন থেকেই টুপি বুনতে শুরু করি। সেই টাকা জমিয়ে কিছু জায়গা কিনে দুটি ঘরও করেছি। ছোট মেয়েকে একটা কেজি স্কুলে ভর্তি করেছি। সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। এ আয় থেকেই বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, নিজ উপার্জনে বাড়ি করেছি। মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। তবে বয়স বাড়ায় এখন আর চোখ পারে না। একটানা টুপি সেলাই করলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চশমা পরেও ততটা কাজ হয় না। দুটা পা নিয়ে স্ক্র্যাচে ভর দিয়েও এখন ভালোভাবে চলতে পারি না।

টুপি সেলাই থেকে মাসে ১৪শ টাকা  থেকে ১৫শ টাকা আয় হয়। আর প্রতিবন্ধি ভাতা পাই। এখনকার বাজারে এই সামান্য টাকায় চলা অনেক কষ্টকর। তাই সরকারের কাছে আবেদন আমাকে যদি একটা কর্মের ব্যবস্থা  (দোকান ঘর) করে দিত। তাহলে বাকি সময়টা হয়ত ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়রা বলেন, দুই পা হারানো প্রতিবন্ধি মেয়েটি একটি সংগ্রামী নারী চরিত্র। মেয়েটি যেভাবে সংসার চালাচ্ছে এটি সমাজের জন্য একটা উদাহরণ। সমাজে অনেক সুস্থ নারীকেও ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। পা হারানো ফেন্সি এর ব্যাতিক্রম। সেসব মানুষকে ফেন্সির জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে ১০ নং শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মর্জিনা খাতুন ফেন্সি আমার ইউনিয়ন পরিষদের একজন ভোটার। প্রতিবন্ধী হয়েও মেয়েটি যেভাবে সাবলম্বী হয়েছে এটা এ দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। তথ্য নিয়েছি ফেন্সি প্রতিবন্ধি ভাতা পায়। তাছাড়া আমার ইউনিয়নে যখন যে সরকারি সুযোগ সুবিধা আসবে আমি তাকে অবশ্যই দেব। তাকে একটি দোকান ঘর করে দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও ভাববেন বলে জানান তিনি।

জীবন চলার পথে থমকে যাবে না নারীরা। প্রতিবন্ধী নারীরাও হয়ে উঠবে স্বনির্ভর। মর্জিনা খাতুন ফেন্সির মতো ঘুরে দাঁড়াবেন আজকের নারী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর