শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

সংগ্রামী মায়ার হাতে নৌকার বৈঠা 

মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০২:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মায়া বেগমের স্বামী নেই। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকার বৈঠা হাতে সংগ্রামে নেমে পড়েন তিনি। 

এখন মায়ার বয়স ৩৮ বছর। প্রায় ১৫ বছর আগে তার স্বামী মো. আলী হোসেন তাকে রেখে চলে যান। আর বিয়ে করেননি মায়া। অভাব-অনটনের সংসারে ৩ কন্যাকে নিয়ে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। প্রতিদিন ভোর না হতেই চলে যান, বাড়ির পাশে ওয়াপদার খালে। খালের দুই-পাড়ের মানুষগুলোকে নৌকায় করে খাল পারাপার করেন মায়া বেগম। এতে জনপ্রতি ৫ টাকা করে পান। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তার। এ টাকা দিয়ে চলে সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখার খরচ। টানাপোড়েনে সংসারে কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি।


বিজ্ঞাপন


মায়া বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের শহীদ হাজী হাওলাদার বাড়ির মৃত নরুল আমিনের মেয়ে। স্বামী পরিত্যক্তার কারণে থাকেন বাবার বাড়িতে। তার বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে গেছে ওয়াবপদা খাল।

তার জীবন যুদ্ধের গল্প নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দৃষ্টিগোচর হন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসক (ডিসি’র) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ’র।

দুই-দুইবার মায়ার বাড়ি পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন। দায়িত্ব নেওয়া হয় তার মেয়েদেরপড়ালেখার খরচ। নৌকাটি মেরামত করার জন্য দেওয়া হয় নগদ ২০ হাজার টাকা। উপহার পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ঠিকানা একটি পাকা-বাড়ি। এভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। ৩ মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন মায়া বেগম তার ছোট মেয়ে বৃষ্টি ও বৃদ্ধা মা সেতারা বেগমকে নিয়ে তার বর্তমান সংসার।

hg


বিজ্ঞাপন


পশ্চিম শহীদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.মনির হোসেন বলেন, ১২ বছর ধরে দেখে আসছি মায়া আপা নৌকা চালিয়ে দুপাড়ের মানুষকে আনা-নেওয়া করেন। সত্যিই তার জীবনটা খুব কষ্টের। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি না করে নৌকা চালান, আমাদের দেখে ভালো লাগছে। ইতোমধ্যে তার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মো. আজম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, মাঝেমধ্যে বিকেলবেলা খালের পাড়ে ঘুরতে আসলে মায়া বেগমের নৌকা দিয়ে আমরা ঘুরেফিরে ৫০ টাকা, অনেকসময় ১০০টাকা দিই। তার জীবনটা একটা সংগ্রামী।

গ্রামবাসী মো.কামাল হোসেন বলেন, মায়া আমাদের সম্পর্কে ভাতিজি হয়। তার স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকে সেই খালে নৌকা চালিয়ে সংসার চালান। মায়া ভালো মেয়ে। মাঝেমধ্যে তার চলতে খুব কষ্ট হয়। সরকার তাকে যে ঘরটা দিয়েছে ওই ঘরটার কাজ সম্পন্ন করেননি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন।

বক্তব্য জানতে একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আলমগীরকে মোবাইল করেও পাওয়া যায়নি।

gff

সংগ্রামী মায়া বেগম ঢাকা মেইলকে জানান, ১২ বছর ধরে এ খালে নৌকা চালিয়ে জীবনযাপন করছি। টানাপোড়েনে সংসার। গত বছর আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে ডিসি স্যার আমাদের বাড়ীতে এসে একটা পাকাঘর করে দেয়। স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকে ৩ মেয়ে নিয়ে খুব কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ইতিমধ্যে আমার বড় মেয়ে খুকি ও মেঝো মেয়ে মেঘলাকে বিয়ে দিই। তারা স্বামীর বাড়ীতে ভালো আছে। ছোট মেয়ে বৃষ্টি আমার সাথে বাড়ীতে আছে। স্বামী রেখে যাওয়ার পর থেকে বাবার বাড়ীতে মায়া বেগমের স্থায়ী ঠিকানা হয়।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর