বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ধীরে ধীরে গতি সঞ্চার করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ক্রমশই এগিয়ে আসছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর অভিমূখে। আবহাওয়া অফিস আশঙ্কা করছে, ভয়াবহ গতি সঞ্চয় করে আছড়ে পড়তে পারে সিত্রাং নামে এই সাইক্লোনটি।
সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপকূলবর্তী এলাকা। ওইসব এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ ও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়।
বিজ্ঞাপন
দুর্যোগের সময় রাষ্ট্রের অঘোষিত দূতের ভূমিকা পালন করেন একজন হ্যাম বা অ্যামেচার রেডিও অপারেটর। দুর্যোগে প্রচলিত সব যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন-টেলিফোন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকে। তখন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন হ্যাম রেডিও অপারেটর। তাই তাকে সব সময় ইমার্জেন্সি স্টেশন পরিচালনা জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের শীর্ষ সংগঠন অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এআরএসবি)।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার ভৌমিক ঢাকা মেইলকে বলেন, সিত্রাং মোকাবেলায় আপদকালীন সময়ে সরকারকে টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এআরএসবির সদস্যদের বেতারযন্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা বিটিআরসি আমাদের ডাকলে আমাদের সহযোগিতা পাবে। এছাড়াও সরকারের যেকোনো উদ্ধারকারী সংস্থার সঙ্গে দুর্যোগের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেতার যোগাযোগে নিরবিচ্ছিন্ন রেখে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে অপারেটরদের।
অনুপ কুমার ভৌমিক আরও বলেন, দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বিভিন্ন ধরনের বেতার যোগাযোগ যন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে আছে ইউএইচএফ, ভিএইচএফ রেডিও এবং এইচএফ রেডিও। এগুলো কোনটা হ্যান্ডহেল্ড, কোনটা বেজ স্টেশন।
বিজ্ঞাপন
অনুপ কুমার জানান, এসব বেতার যন্ত্র পরিচালনার জন্য হ্যামদের নিজস্ব ব্যাটারি ব্যাকআপ, পোর্টেবল জেনারেটর, সোলার চার্জার এবং ছোট আকারের উইন্ডমিল রয়েছে। ফলে দুর্যোগের সময় বেতারযন্ত্র চালু রেখে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য সংগঠনটির সদস্যরা সদা প্রস্তুত।
দুর্যোগের সময় অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের ভূমিকা সম্পর্কে রেডিও অপারেটর হাসান মোহাম্মদ আকরাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তখন টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হয়। ওই সময় যোগাযোগের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও।
তিনি জানান, সাধারণত মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক টাওয়ারকেন্দ্রীক। দুর্যোগের সময় এসব টাওয়ার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে মোবাইল ফোনে সিগন্যাল মেলে না। এ অবস্থায় যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে বেশ কার্যকরী ডিভাইস হ্যাম রেডিও। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলায় উদ্ধারকাজে সঠিকভাবে বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হ্যাম রেডিও।
তিনি বলেন, দুর্যোগে যখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়, যোগাযোগব্যবস্থা বলতে আর কিছুই থাকে না, ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন হ্যাম। অ্যামেচার রেডিও বা শৌখিন বেতার যোগাযোগব্যবস্থায় একজন ব্যবহারকারী নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ বেতার গ্রাহক ও প্রেরকযন্ত্রের অধিকারী। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেতারতরঙ্গ ব্যবহার করে নিজের শহর, দেশ, এমনকি পৃথিবীর যেকোনো দেশের ওই ধরনের বেতারযন্ত্র ব্যবহারকারীর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা যায়।
এআরএসবি’র পক্ষ থেকে অনুপ কুমার ভৌমিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের গতিবিধি নজর রাখছি আমরা। সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। রেডিওর মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশের হ্যামদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারকে বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা।
এজেড