ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে নিয়মিত সতর্কবাতাও দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় জেলার বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসও বইছে। ইতোমধ্যেই উপকূলের বিভিন্ন স্থানে চলছে মাইকিং। মানুষকে নিরাপদ রাখতে দেওয়া হচ্ছে বার্তা। সাতক্ষীরা, খুলনা বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
সবশেষ আবহাওয়া বার্তায় উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলায় ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলার পর থেকে উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে মাইকিং। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ওড়ানো হয়েছে লাল পতাকা।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সকাল ৯টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাতাসের মাত্রাও বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে ৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কার কথাও বলেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সামাজিক মাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রিয় উপকূলবাসী, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকুন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত আছে, আমরা পাশে আছি। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও দিয়ে রেখেছেন সাতক্ষীরা জেলা সামাজিক মাধ্যমে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পদ্মপুকুর ইউনিয়ন সিপিপির টিম লিডার জি এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, নদীতে এখন ভাটা, জোয়ার উঠছে। সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানি গতদিন থেকে আজ বেশি, এলাকার মানুষ নাজুক বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পদ্মপুকুরের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, কামালকাটি, ঝাপা, পশ্চিম পাতাখালী, পূর্ব পাতাখালী, চন্ডিপুর চাউলখোলা, পাখিমারা এলাকার বেড়িবাঁধ নাজুক। এলাকাবাসীকে মাইকিং করে সর্তক করা হচ্ছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে শুকনো খাবার ও পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে জানিয়েছেন গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম। তিনি আরও বলেন, চারপাশে নদীবেষ্ঠিত গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধ আইলার পর থেকে বেশ নিচু হয়ে আছে।
এছাড়া ইয়াস ও আম্পানের পর থেকে বড়গাবুরা, হরিশখালীসহ কয়েকটি অংশের বাঁধও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় ইউনিয়নের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিম্নচাপকে ঘিরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় সাইক্লোন শেল্টারগুলো খুলে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করেছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনা উপকূলেও সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। দাকোপ-কয়রাসহ অন্যান্য উপজেলার মানুষ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সকাল থেকে শুরু হয়েছে মাইকিং। জেলার ৪০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জরুরি শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা, সাইক্লোন শেল্টারে যারা আসবেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আগতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০২৪-৭৭৭২৬৫৯২। উপকূলীয় উপজেলায় চলছে মাইকিং।
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উপকূলের সকল মসজিদে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে দাকোপে ১১৮টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, কয়রায় ১১৭টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, পাইকগাছায় ৩২টি, তেরখাদায় ২২টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহেল মারুফ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি শুকনো খাবারসহ জরুরি পণ্য মজুদ রেখেছে। ‘সিত্রাং’ মোকাবিলায় বরিশাল জেলায় ১ হাজার ৫১ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেখানে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করাসহ জেলার সব স্থানে মাইকিং ও আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বরিশাল নদীবন্দর থেকে ১২ রুটে একতলা লঞ্চ ও স্পিড বোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ভোলায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।
এদিকে কক্সবাজারে সিত্রাংয়ের প্রবলতা ও সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ। ডিসি জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি উপলক্ষে রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির সভা হয়েছে। জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ প্রতিটি উপজেলা পরিষদে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান হতেই জরুরি নির্দেশনা ও সেবা পাওয়া যাবে।
পর্যটকদের নিরাপদ দূরত্বে থেকে সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের জন্য সতর্ক করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পর্যটকদের নিরাপদে চলাফেরার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউএইচ/এইউ