তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে লোকাল বাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।
আজ দেশে তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লোকাল বাস ভাড়া করে অনুষ্ঠানস্থলে রওনা দেন। এতে করে হঠাৎ করেই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে লোকাল বাসের সংখ্যা কমে যায় এবং কর্মঘণ্টার শুরুতেই সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা ও দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।
বিজ্ঞাপন
সকাল ৮টার পর থেকেই মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও ডেমরার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে লোকাল বাসের ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেসব বাস সাধারণত নিয়মিত রুটে চলাচল করে, সেগুলোর একটি বড় অংশ দলীয় কর্মসূচির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। ফলে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও রোগীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। অনেকেই নিরুপায় হয়ে রিকশা, সিএনজি কিংবা বেশি ভাড়া দিয়ে বিকল্প পরিবহনে উঠতে বাধ্য হন।
বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো রুটে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাসের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে একটি বাস এলেই যাত্রীদের ভিড় ও হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এতে নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের বেশি সমস্যায় পড়তে দেখা গেছে। কেউ কেউ সময় বাঁচাতে হেঁটে বা রাইড শেয়ারিংয়ের আশ্রয় নেন, তবে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকের জন্য সেটিও সহজ ছিল না।
এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে বাস ভাড়া দেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে একসঙ্গে বড় পরিসরে বাস ভাড়া নেওয়ায় স্বাভাবিক যাত্রী পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। কয়েকজন চালক জানান, মালিকপক্ষের নির্দেশে তারা নির্দিষ্ট কর্মসূচির জন্য বাস নিয়ে বের হন। এতে লোকাল রুটে চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়।
পল্টন এলাকায় অপেক্ষমাণ বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদ মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন আধা ঘণ্টার মধ্যেই অফিসে পৌঁছে যাই। আজ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছিলাম না। পরে বেশি ভাড়া দিয়ে অন্য যানবাহনে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য সাধারণ মানুষের এভাবে ভোগান্তিতে পড়া খুবই দুঃখজনক।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বাসের সহকারী কামাল হোসেন জানান, সকাল থেকেই আমাদের বাস প্রোগ্রামের জন্য বুকিং ছিল। মালিক বলেছে, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। লোকাল যাত্রী তুললে দেরি হবে, তাই রুটে চলিনি। এতে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে, সেটা আমরাও বুঝি, কিন্তু আমাদেরও নির্দেশ মানতে হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সমাবেশ বা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সময় আগাম সমন্বয় না থাকায় এমন পরিস্থিতি বারবার তৈরি হয়। লোকাল বাস দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাড়া নেওয়া হলে বিকল্প পরিবহন নিশ্চিত করার উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। নাহলে কর্মজীবী মানুষের ক্ষতি যেমন হয়, তেমনি নগর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দও ব্যাহত হয়।
সব মিলিয়ে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংবর্ধনাকে ঘিরে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায়ও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে, যাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাচল অযথা ব্যাহত না হয়।
এম/এফএ



















































