শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

গ্রাম পুলিশের ওপর হামলা, জব্দ করা মালামাল কেড়ে নিলেন বিএনপি নেতা

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এমন অভিযোগে সেখানে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মালেক। বালু উত্তোলনের সত্যতা পাওয়ায় সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তিনি। সেসময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ট্রলারসহ একটি ড্রেজার জব্দ করা হয়। সেই জব্দকৃত মালামাল স্থানীয় গ্রাম পুলিশের ওপর হামলা করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জোনায়েদ ব্যাপারী নামে এক শ্রমিকদল নেতা।

সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের চর ভয়রা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ নিয়ে মামলা হলে মামলা উঠিয়ে নিতে আবারও সোমবার (১৭ মার্চ) রাতে গ্রাম পুলিশের ওপর হামলা চালায় জোনায়েদ ব্যাপারীসহ কয়েকজন।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনায় গ্রাম পুলিশের সদস্য আমির হোসেন বাদী হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী মান্নান ব্যাপারী ছেলে শ্রমিক দল নেতা জুনায়েত ব্যাপারী (৫০), গোসাইরহাট উপজেলা আলাওলপুর ইউনিয়নের আবুল হোসেন দর্জির ছেলে মাহামুদ দর্জি (৪৫), পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের চর ভয়রা গ্রামের মৃত আবেদ আলি সরকারের ছেলে নেওয়াজ সরকার (৩৫)।

থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ১০ মার্চ সকালে ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের চর ভয়রা গ্রামে জয়ন্তী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে জান ডামুড্যা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মালেক । সেসময় সেখান থেকে একটি ট্রলারসহ ড্রেজার জব্দ করেন তিনি। এবং জব্দ তালিকা তৈরি করে জব্দ করা মালামাল ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দেখভালের দায়িত্বে স্থানীয় গ্রাম পুলিশদের হেফাজতে রাখা হয়। পরে তাদের দায়িত্ব রেখে সেখান থেকে চলে আসেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মালেক। এরপর  সেখানে আসেন পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী মান্নান ব্যাপারীর ছেলে শ্রমিক দল নেতা জোনায়েদ ব্যাপারী, মাহমুদ দর্জি, নেওয়াজ সরকারসহ ৮/১০। তারা প্রথমে মালামালগুলো জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে সেগুলো নিয়ে যায় অভিযুক্ত জোনায়েদ ব্যাপারী ও তার লোকজন। এসময়  স্থানীয়রা আহত গ্রাম পুলিশদের উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরে আহত গ্রাম পুলিশ আমির হোসেন বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলা হওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী গ্রাম পুলিশ আমির হোসেনকে মামলা উঠিয়ে নিতে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দেন। তারই জেরে গতকাল রাতে গ্রাম পুলিশ আমির হোসেন বাসায় যাওয়ার পথে আবারও তার ওপর হামলা চালায় জোনায়েদ ব্যাপারীসহ কয়েকজন। এসময় তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

আরও পড়ুন

শরীয়তপুরে জমে উঠেছে ঈদের বাজার, দাম বাড়তি

আহত গ্রাম পুলিশ সদস্য আমির হোসেন বলেন, গত সোমবার সকালে এসিল্যান্ড স্যার আমাদের এখানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ট্রলার ও ড্রেজার জব্দ করে। আমার ও গ্রাম পুলিশ সুলতান ব্যাপারীর জিম্মাদারিতে সেগুলো রেখে তারা উপজেলায় চলে যায়। স্যার যাওয়ার পরে সেখানে জোনায়েদ ব্যাপারী, নেওয়াজ সরকার, মাহমুদ দর্জিসহ ৮/১০ জন লোক এসে প্রথমে আমাদের হুমকি দিয়ে বলে মালামালগুলো তাদের দিয়ে দিতে তখন আমরা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাদের ওপর হামলা করে মালামালগুলো জোরপূর্বক নিয়ে যায়। পরে আমি ডামুড্যা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। আমি অভিযোগ করার কারণে গতকাল রাতে আমাকে আবারও মারধর করে জোনায়েদসহ তারা। আমাদের মামলা উঠিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমি এই হামলার সঠিক বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত জোনায়েদ ব্যাপারীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় আরেক অভিযুক্ত নেওয়াজ সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের কখনোই মারধর করিনি। এগুলো মিথ্যা এবং বানোয়াট।

বিষয়টি নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল মালেক বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এমন অভিযোগে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। পরে জব্দ করা মালামাল স্থানীয় গ্রাম পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে জানতে পারলাম মালামালগুলো তাদের ওপর হামলা করে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান মানিক জানান, হামলার ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠানো হয়। গ্রাম পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ধরতে একাধিকবার অভিযান করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন