শরীয়তপুরে ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পোশাক ও কাপড়ের বেচাকেনা। শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এখানকার মার্কেটগুলোতে। বাজার জমজমাট হলেও রমজানের বেচাকেনা কিছুটা কম। তবে ঈদের বাজার হওয়ায় দোকানগুলোতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সরেজমিনে শরীয়তপুর শহরের পালং বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজার অনুযায়ী পোশাকের রয়েছে রকমফের। এই এলাকার অধিকাংশ মার্কেট রয়েছে থ্রি-পিসের পসরা। ভোজেশ্বর, আংগারিয়া বাজারে রয়েছে দেশি-বিদেশি থান কাপড়। আবার শহরের অন্য মার্কেটগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি কাপড়ের থ্রি-পিস, রেডিমেড থেকে শুরু করে সব বয়সের ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য কাটা কাপড়।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া শহরের হলের সামনের রাস্তার দুই পাশে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি থান কাপড় থেকে শুরু করে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস এবং ২ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের পোশাক।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর থ্রি-পিস, শাড়ি, কাটা কাপড়, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্টের কাপড়ের চাহিদা ভালো থাকলেও গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাচ্চাদের থ্রি-পিসের চাহিদা ভালো। এসব পোশাক তারা পাইকারি এনেছে ঢাকার ইসলামপুর থেকে। যার মূল্য পড়েছে পাইকারি প্রতি বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকায়। যা খুচরা ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চাদের এসব থ্রি-পিস, লেহেঙ্গার ভালো চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুরের সৌদিয়ান মার্কেটের নাহিদ গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী নাহিদ হোসেন বলেন, রোজার শুরুতে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা কিছুটা আবার বাড়বে। এখন বেচা বিক্রি কিছুটা কম।
মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের ম্যানেজার হাশেম খান বলেন, এবার বাচ্চাদের নতুন ড্রেস ফারসি বেশি বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
পালং বাজারের আশফাক বিতানে গিয়ে দেখা গেছে, কাটা কাপড়ের মধ্যে চিলি কাপড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি গজ ১৩৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। বয়েল কাপড় রয়েছে প্রতি গজ ১০০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। টিস্যু কাপড় রয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
এই মার্কেটের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়া ও আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।
পাঞ্জাবির মধ্যে চিকেন কারি প্রতি গজ ৪০০ টাকা ও সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি প্রতি গজ ৩৫০ টাকা করে দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর সিকোয়েন্স পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকলেও এ বছর কম। গরমের কারণে এত মোটা কাপড় দিয়ে অনেক পাঞ্জাবি বানাতে চাচ্ছেন না।
এ বছর মহিলাদের জামা ও মেক্সির জন্য লিনেন কাপড়ের গজ বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০০ টাকায়। চায়না কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।
শরীয়তপুরের ভোজেশ্বর বাজারে মহিলাদের শাড়ির বাজারেও রয়েছে বৈচিত্র্য। বিশেষ করে জামদানি ও কাতান শাড়ির চাহিদা বেশি। বি প্লাসের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। এছাড়া পাইকারি বাজারে ৫০০ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পালং বাজারে চাহিদার শীর্ষে থ্রি-পিস
পালং বাজারের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি কাপড়ের থ্রি-পিস ৫৯০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস রয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ভারতীয় থ্রি-পিস মাঝারি ধরনেরগুলো পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
বেচাকেনা কম শার্ট-প্যান্টের কাপড়ের
শরীয়তপুরে নারীদের পোশাকের রমরমা ব্যবসা থাকলেও পুরুষদের শার্ট ও প্যান্ট পিসের বেচাকেনা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আল হেরা ফেব্রিক্সের আলমগীর হোসেন বলেন, একটা প্যান্ট পিস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। শার্ট পিস পাওয়া যায় ৫০০-৬০০ টাকায়। মানভেদে বেশি দামের শার্ট ও প্যান্টের কাপড়ও রয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা কম। মানুষ এখন রেডিমেড খুঁজে। কাটা কাপড় কিনে কেউ সেলাই করতে চায় না। যারা চাকরিজীবী তারা ঈদকে সামনে রেখে মোটামুটি প্যান্ট-শার্ট বানান।
পাঞ্জাবি কিনতে আসা আরিফ বলেন, পাঞ্জাবির দাম বেশি তাই দেখতেছি। ভালো হলে দামে মিললে কিনব। নয়তো না।
মায়ের সঙ্গে ঈদের পোষাক কিনতে আসা লাবিবা বলে, আমার বাজেট কম তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। সহজলভ্যর মধ্যে যা হবে তাই কিনব। তবে এবার জামা কাপড়ের দাম অনেক বেশি।
প্রতিনিধি/এসএস