বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালেও যানবাহন চলাচল থেমে নেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় টানেল। আর যানবাহন চলাচলের প্রথম ৬ ঘণ্টায় টানেল দিয়ে ৭৭৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই প্রাইভেট কার-মাইক্রো। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
টানেল প্রকল্পের টোল ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উম্মুক্ত করার প্রথম ঘণ্টায় (সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত) যানবাহন চলাচল করেছে ৭৩টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৭৭৬টি গাড়ি বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে পারাপার করেছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত পারাপার করা যানবাহনগুলোর অধিকাংশই প্রাইভেট কার ও মাইক্রো। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকও রয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেলে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি জানান, সেতু বিভাগের নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী টানেল পাড়ি দিতে পিকআপ ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ সিটের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ সিটের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮ দশমিক ১ থেকে ১১ টন) ৬০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ১০০০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
টানেল প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) আবুল কালাম আজাদ বলেন, টানেলের টোল আদায়ের জন্য আনোয়ারা প্রান্তে ১২টি কাউন্টার রয়েছে। এরমধ্যে প্রথমদিন ১০টি চালু করা হয়েছে। এখানে তিনভাবে টোল দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে এখন ম্যানুয়ালি টোল আদায় করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সকাল ৬টা থেকে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর দুই পাশ থেকেই যানবাহন চলাচল করছে। এ পর্যন্ত যে পরিমাণ যানবাহন পারাপার করেছে হরতাল না হলে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করত। এতে আর্নিংও বাড়ত।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টানেল প্রকল্পের সব কাজ সময়মতো হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে টানেল উদ্বোধন করেন। এরপর নিজ হাতে টোল দিয়ে টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি। তিনিই টানেলের প্রথম টোল দাতা।
![]()
এরপর রোববার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উম্মুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম দিনে হরতালের কবলে পড়ে টানেলে যানবাহন চলাচল। তবে সকাল থেকে এ পর্যন্ত হরতালের তেমন প্রভাব না পড়লেও সড়কে যানবাহনের চাপ কম। সে হিসেবে টানেলে প্রত্যাশীত যানবাহন চলাচলও কমে গেছে।
প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসেবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু হরতালের কারণে প্রথম দিনেই হোঁচট খেতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় সংঘর্ষের জের ধরে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী।
টিবি






































