মাঠে গড়ালো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। ২০টি দলের অংশগ্রহণে আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত চলবে চার-ছক্কার ধুন্ধুমার আসর। সবচেয়ে বড় ক্রিকেট বিশ্বকাপও বলা যায় এবারের আসরকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বৈশ্বিক আসর। ক্রিকেটকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দিতে এই প্রয়াস ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এই আসরে চারটি গ্রুপ থেকে সেরা আটটি দল জায়গা করে নিবে সুপার এইটে।
আজ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। বাংলাদেশ তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিয়ে। এবারের আসরে বাংলাদেশ আছে ডি গ্রুপে যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে আরও আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, নেপাল। তারুণ্যনির্ভর কেমন হবে টাইগারদের বিশ্বকাপ -
বিজ্ঞাপন
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দলের ভিতর মাত্র দুই তারকা অভিজ্ঞ। এক টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এ বাদে দলের বাকি তারকারা বেশ তরুণ। যার মধ্যে ৬ জন এসেছে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে অফফর্মে মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা দল।
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে হারের পর টাইগাররা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও সিরিজ হেরেছে। এরপর বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও বাজে পারফর্ম্যান্সের প্রদর্শনী সাজিয়ে হেরেছে লাল-সবুজের দল। এর সঙ্গে দলের মূল ক্রিকেটারদের ইনজুরি চিন্তার ভাজ ফেলেছে লাল-সবুজের জার্সি ধারীদের।
ব্যাটারদের অফফর্ম দুশ্চিন্তা-
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাটারদের টপ অর্ডাদের অফফর্মের খরা চলছে। বাংলাদেশের হয়ে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ নাজমুল হাসান শান্তর ব্যাট হাসে না বেশ কিছু দিন। একই সঙ্গে টাইগার শিবিরে দুশ্চিন্তার কারণ বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে অন্যতম ভরসার নাম লিটন দাসের ব্যাটে রান না পাওয়া। বিশ্বকাপে যদি লিটন নিজের পারফরম্যান্স উপহার দিতে না পারেন সেক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে টিম টাইগার্স।
ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের আগে সিরিজ গুলোতে লিটনের অফফর্মের অভাবে রান খরায় ভুগতে হয়ে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ গুলোর দিকে তাকলে সহজেই তা চোখে আসবে ক্রিকেট প্রেমীদের। এদিকে সৌম্য একদিন রান পান তো দুই দিন তার ব্যাট হাসে না। ফলে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটারদের অফফর্ম বেশ চিন্তায় ফেলেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের চেনা ছন্দে ফেরাতে চেষ্টা করছেন তারা।
এদিকে এই তিন টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার ভিড়ে নজর কাড়তে পারেন যুব বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিম। তিনি জায়গা পেলে সুযোগ হারাতে পারেন লিটন কিংবা সৌম্যর যে কোনো একজন। তাওহীদ হৃদয় অবশ্য ভরসা হয়ে উঠতে পারেন। ব্যাটিং ইউনিটে বড় ভূমিকা রাখবেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর সুযোগ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে মুখিয়ে আছেন তরুণ জাকের আলী অনিক।
বোলিংয়ে লড়াইয়ের ছাপ টাইগারদের- শেষ সময়ে পেসারদের ইনজুরিতে দুশ্চিন্তায় ম্যানেজমেন্ট
ব্যাটারদের অফফর্মের সময়ে বোলিং ইউনিট লড়াই করার চোখ রাঙাচ্ছে। আর এই ইউনিটে সব থেকে ভরসার প্রতীক টাইগারদের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্ব মঞ্চ এলে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। তবে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজও ফেলেছে। তবে অনেকেরই ধারণা, বিশ্বমঞ্চে নিজের সেরা ছন্দ খুঁজে পাবেন তিনি।
এদিকে সাকিবের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন শেখ মাহেদী হাসান। আর লেগ স্পিনের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেন তরুণ রিশাদ হোসেনও। এছাড়া প্রয়োজন বুঝে দলের কঠিন সময়ে হাত ঘুড়িয়ে ম্যাচে ফেরাতে প্রস্তুত অভিজ্ঞ রিয়াদও। এদিকে বিশ্বকাপের আগে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাসকিনের সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরি।
তবে সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপে টাইগারদের পেস ইউনিটে নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। এদিকে হালকা করে চোটের সঙ্গে লড়ছেন মুস্তাফিজও। আর বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ইনজুরিতে পরে হাতে ছয় সেলাই লেগেছে পেসার শরিফুল ইসলামের। ফলে শেষ ফর্মের তুঙ্গে থাকা শরিফুলের চোট ম্যানেজমেন্টকে চিন্তায় ফেলেছে।
লাল-সবুজ জার্সিতে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে যারা-
তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশর ব্যাটিংয়ে চোখ রাখলে, সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন তানজিদ হাসান তামিম, যিনি ইনিংসের শক্ত ও গতিময় শুরু দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে ১২০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। এই অল্প সময় হয়তো তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু বিশ্বমঞ্চে মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন তানজিদ।
ব্যাটিং অর্ডারে আরেক সম্ভাবনাময় তারকা তৌহিদ হৃদয়। ডানহাতি এই ব্যাটার এরই মধ্যে তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে কিছু দুর্দান্ত খেলেছেন এবং সুযোগ পেলেই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছেন। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের পরবর্তী ভরসা হয়ে উঠতে পারেন তৌহিদ। তিনি ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে আগামীতে অনেকবারই সুদিনের দেখা মিলতে পারে বাংলাদেশ দলের। ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট তৌহিদের, নামের পাশে রয়েছে দুটি হাফসেঞ্চুরি।
লোয়ার অর্ডারে ব্যাট ও বল দুই হাতেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন রিশাদ হোসেন। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা অল্প কয়েকজন লেগ স্পিনারের মধ্যে তিনি একজন এবং তার ভালো খেলার প্রমাণ অনেকবারই দিয়েছেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় সম্পদ ক্লিন শট মারার ক্ষমতা। ১৩৫-এর বেশি স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলার হিসেবে ১৫ উইকেটও নিয়েছেন রিশাদ।
এবারের বিশ্বকাপে মুস্তাফিজুর রহমানের ওপরও চোখ থাকবে সবার। কেন না সম্প্রতি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফিজ প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি, এখনো দেওয়ার আছে অনেক কিছু। তার প্রমান দিয়েছেন তিনি, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে একাই নিজের পকেটে তুলে নিয়েছেন ছয় উইকেট। এই সফল পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে তাকে অনুপ্রাণিত করবে।