ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রাসী ক্রিকেট উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০২৪। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ কানাডার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল সহ-আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এ ম্যাচে কানাডাকে উড়িয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে স্বাগতিকরা। এদিকে এবারের আসর শুরু হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন প্রিয় দলের পারফর্ম্যান্স দেখতে।
সে জন্যে সমর্থকদের অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কয়েকটি দিন। কেননা, টাইগাররা বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলবে ৮ জুন, প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে লাল-সবুজের দল। এবারের আসরে বাংলাদেশ আছে ডি গ্রুপে যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে আরও আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, নেপাল। ডি গ্রুপে কেমন হবে টাইগারদের বিশ্বকাপ লড়াই? চলুন জেনে আসা যাক
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ:
বিশ্বকাপের আগে থেকেই বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে হারের পর টাইগাররা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও সিরিজ হেরেছে। এরপর বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও বাজে পারফর্ম্যান্সের প্রদর্শনী সাজিয়ে হেরেছে লাল-সবুজের দল।
বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ব্যাটিং বিভাগ নিয়েও স্বস্তিতে নেই টাইগাররা। টপ অরড়ডার ব্যাটাররা দীর্ঘ সময় ধরেই রানের দেখা পাচ্ছেন না। ওপেনিং জুটি নিয়েও নিশ্চয়তা নেই। লিটন দাস অফ ফর্মে আছেন লম্বা সময় ধরে, ধারাভিকভাবে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্তও। তাই বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিকল্প নেই টাইগারদের।
এদিকে বিশ্বকাপের আগে বোলিং নিয়েও দুঃসংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বা হাতে চোট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। লম্বা সময় ধরেই টাইগারদের গুরুত্বপূর্ণ বোলার তিনি। হাতে ৬টি সেলাই পড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন কি না তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই, এমনকি টুর্নামেন্টেই তিনি আর ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে আছে সংশয়। চোট থেকে সুথ হয়ে এখনো মাঠে ফেরা হয়নি তাসকিন আহমেদের।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচে তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে টাইগারদের জন্য অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করবে সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা। একই সঙ্গে তানজিদ তামিম এবং তাওহিদ হৃদয়ের মত তরুণ ক্রিকেটাররা জ্বলে ওঠতে পারলে সুপার এইটের স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
ডি গ্রুপে সবথেকে শক্তিশালি দল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের জন্য দারুণ এক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে প্রোটিয়ারা। দলে আছেন কুইন্টন ডি কক, ডেভিড মিলারদের মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা যারা যে কোনো সময় ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। এছাড়াও এইডেন মার্করাম এবং হেইনরিখ ক্লাসেনের মত মারকুটে ব্যাটাররাও আছেন প্রোতিয়াদের দলে। এ দুজন সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। একই সঙ্গে দলে আছেন ট্রিস্টান স্টাবসের মত ফিনিশার। ব্যাত হাতে এসব ক্রিকেটাররা যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই ধ্বংসযজ্ঞ চালাবার ক্ষমতা রাখেন।
এদিকে দলে দারুণ সব বোলারও আছে প্রোটীয়াদের। জেরাল্ড কোয়েটজে, মার্কো ইয়ানসেনরা প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য হুমকি হতে পারেন। আইনরিখ নরকিয়া, কাগিসো রাবাদারা গত বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করেছেন। এছাড়াও কেশব মহারাজ, তাব্রেইজ শামসিদের মত স্পিনাররাও আছেন দলে। ফলে সুপার এইটের পথে ডি গ্রুপের সবথেকে ফেভারিট দলটিই দক্ষিণ আফ্রিকা।
ডি গ্রুপে বাংলাদেশের জন্য সবথেকে বড় হুমকিও প্রোটিয়ারাই।
নেদারল্যান্ডস:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত দুইবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। দুইটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এগিয়ে থাকলেও এবারের বিশ্বকাপে ডাচরা টাইগারদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ডি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল নির্ধারিত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচে বাজেভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাই এবারের আসরে ডাচদের মোটেই হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
শ্রীলঙ্কা:
সাম্প্রতিক সময়ে এসে চিরপ্রিতদ্বন্দ্বীতে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এ দুই দলের ম্যাচ রূপ নেয় দারুণ উত্তেজনায়। গত বিশ্বকাপে টাইম আউট বিতর্কের পর দুই দলের মাঝে উত্তাপ ছড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। তাই এবারের বিশ্বকাপে এ দুই দলের ম্যাচ যে দারুণ উত্তেজনা ছড়াবে তা বলাই যায়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনবকটাই এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এবারের বিশ্বকাপে ডি গ্রুপ থেকে সুপার এইটে যাওয়ার অন্যতম দাবিদার।
তাই সুপার এইটে স্থান নিশ্চিত করতে হলে শ্রীলঙ্কাকে ঘারানোর বিকল্প নেই টাইগারদের সামনে। কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কা, পাথুম নিশাঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমারা বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠতে পারেন। বল হাতে মাথিশা পাথিরানা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুনিথ ওয়াল্লালেগেরাও টাইগার ব্যাটারদের পরীক্ষা নেবেন।
নেপাল:
এবার দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে নেপাল। বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এ টুর্নামেন্টের সবগুলো আসরেই খেলেছে। তাই অভিজ্ঞতা তো বটেই, শক্তিমত্তায়ও নেপালের চেয়ে বেশ এগিয়েই আছে বাংলাদেশ।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশ কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে, এমন অবস্থায় তাই বিশ্বকাপে নেপালকে হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে ছিলেন নেপালি অধিনায়ক রোহিত পোড়েল। এছাড়া দলে আছেন গুলশান জার মত তরুণ ক্রিকেটার।