বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শবে বরাতে ৭ শ্রেণির মানুষ ক্ষমা পাবে না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

শবে বরাত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। ১৪ শাবান দিবাগত রাত তথা ১৫ শাবানের রাতকে হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। যা আমাদের সমাজে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। ‘শবে বরাত’ মূলত ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। 

বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)


বিজ্ঞাপন


শবে বরাত বা অর্ধ শাবানের রাত মুমিনদের জন্য ক্ষমা লাভের একটি সুন্দর সুযোগ। তবে এমন ফজিলতপূর্ণ রাতেও কিছু ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্তির নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।

১. যে শিরক করে
শিরক সবচেয়ে জঘন্য পাপ। এ পাপের ক্ষমা নেই। যে ব্যক্তি শিরকের মতো ঘৃণিত পাপে লিপ্ত থাকবে, শবেব রাতেও আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন না। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে শিরক করে। এর চেয়ে নিম্নস্তরের পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’ (সুরা নিসা: ৪৮)

২. বিদ্বেষ পোষণকারী
দ্বীনি কোনো কারণ ছাড়া যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ লালন করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে এ রাতে ক্ষমা করবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, বিদ্বেষ পোষণকারী দুই ব্যক্তি পারস্পরিক সন্ধি করার আগ পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫) বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরি ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফেরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ (লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬)

আরও পড়ুন: হিংসা-বিদ্বেষ না থাকা জান্নাতিদের গুণ


বিজ্ঞাপন


৩. হত্যাকারী
কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা কুফরের সমপর্যায়ের অপরাধ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া জঘন্য পাপ, আর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা কুফরি।’ (সহিহ বুখারি: ৭০৭৬) হত্যাকারীর গুনাহ শবেবরাতেও ক্ষমা করা হবে না। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আশা করা যায়, সব গুনাহই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন, তবে যে ব্যক্তি মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল অথবা ঈমানদার কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করল, তাদের ক্ষমা করা হবে না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৯৮০)

৪. সম্পর্ক ছিন্নকারী
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। যারা এমন কাজ করে, তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার অভিসম্পাত থাকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেন...।’ (সুরা মুহাম্মদ: ২২-২৩) জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তির কোনো আমল আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শবেবরাতসহ অন্যান্য ফজিলতপূর্ণ রাতে এমন ব্যক্তির ক্ষমাপ্রাপ্তির সুযোগ থাকে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আদম সন্তানের আমল আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৬১)

আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবে না যারা

৫. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী
পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা নাজায়েজ। এটি অহংকারের প্রতীক, যা শরিয়তে নিষিদ্ধ। অহংকারবশত যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে, তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারের কারণে কাপড় ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার দিকে দৃষ্টি দেবেন না।’ (সহিহ বুখারি: ৩৬৬৫) অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘টাখনুর যে অংশ কাপড় দ্বারা আবৃত থাকবে, তা জাহান্নামে যাবে।’ (সুনানে নাসায়ি,: ৫৩৩১)

৬. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান
মা-বাবার অবাধ্য সন্তান কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না। শবে বরাতের রাতেও এসব অবাধ্য সন্তানদের আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা নেই। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘রবের সন্তুষ্টি মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে।’ (সাহিহুল জামি: ৩/১৭৮)

আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি ‍দুনিয়ায় দেওয়া হয়

৭. মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তি 
ইসলামে মাদকদ্রব্য সেবন হারাম। মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তিরা মর্যাদাপূর্ণ রাতেও ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রথমত হারাম খেয়ে ইবাদতের কোনো মূল্য নেই। দ্বিতীয়ত মাদকদ্রব্য সেবন শিরকের কাছাকাছি জিনিস। রাসুল (স.) বলেছেন- مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ ‘অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য।’ (ইব্নু মাজাহ: ৩৪৩৮) অতএব, নেশাগ্রস্তরা শবেবরাতে ক্ষমা লাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হবে। 

এছাড়াও জেনা-ব্যভিচার, যাদু, সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি পাপ থেকে মুক্ত থাকা কর্তব্য। কারণ এসব গুনাহে অটল থাকলে কোনো ফজিলতপূর্ণ রাতেই ক্ষমা লাভের আশা করা যায় না।
 
তবে যদি কেউ উপরোক্ত পাপগুলোর জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে এসব পাপে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকার করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন। কারণ তাওবার মাধ্যমে সব গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে কেউ তাওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সত্কর্ম করলে, আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান: ৭০)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর