এক মাজলুমকে দুনিয়াতেই আল্লাহ তাআলা জান্নাত দেখিয়েছেন। তিনি হলেন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম। ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে নবী মুসা (আ.)-এর লালন-পালনের ব্যবস্থার মূলে ছিলেন তিনি। তাঁর মুখনিঃসৃত কথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেছেন এভাবে— ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, সে (মুসা আ.) আমার ও তোমার চক্ষুশীতলকারী হবে, তোমরা তাকে হত্যা করো না, হয়ত সে আমাদের উপকার করবে কিংবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করব, তারা তা অনুধাবন করতে পারেনি।’ (সুরা কাসাস: ৯)
স্বামীর ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপ্রাসাদের সব রকম বিলাসিতা ত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন আসিয়া। এ কথা জানতে পেরে আসিয়ার প্রতি ফেরাউন ক্রোধান্বিত হয়। আসিয়ার সঙ্গীদের একে একে হত্যা করে। অতঃপর ঈমান ত্যাগ করার জন্য আসিয়াকে নানাভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকে। কিন্তু প্রলোভনে কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আসিয়াকে কঠিন শাস্তি দেওয়া শুরু করে ফেরাউন। হাতে ও পায়ে লোহার পেরেক লাগিয়ে অদম্য প্রহার করা হয়। কঠিন নির্যাতনেও ধৈর্যহারা হননি ইস্পাত কঠিন ঈমানের অধিকারী আসিয়া। নির্যাতন-নিপীড়নে জীবনের আলো যখন ফুরিয়ে যাচ্ছিল আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে তিনি বিশেষ দোয়া করেন যে আল্লাহ জান্নাতে তাঁর জন্য একটি ঘর তৈরি করেন। এই মহীয়সী নারীর জীবনের শেষ আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং তাকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টজগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারীদের তালিকাভুক্ত করে চিরকালের জন্য সম্মানিত করেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ৮ শ্রেণির মানুষের জন্য জান্নাত ওয়াজিব
আসিয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রীর উপমা পেশ করছেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহ, আমার জন্য জান্নাতে আপনার কাছে একটি ঘর নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফেরাউন ও তার কার্যাবলী থেকে রক্ষা করুন এবং আমাকে জালেম জনগোষ্ঠী থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা তাহরিম: ১১)
ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। জান্নাতে নিজের বাড়িও দেখানো হয় আসিয়াকে। নিজ চোখে বাড়ি দেখে হেসে দেন তিনি। এদিকে চরম নির্যাতনের মধ্যে আসিয়ার মুখে হাসি দেখে ফেরাউনের ক্রোধ আরো বেড়ে যায়। ফেরাউন বলল, দেখছ, কী উন্মাদ হয়ে গেছে! আমরা তাঁকে চরম শাস্তি দিচ্ছি। আর সে হাসছে। ক্ষোভে ফেরাউন এক প্রকাণ্ড প্রস্তর নিক্ষেপ করে। এরপরই আসিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পৃথিবীবাসীর জন্য রেখে যান ঈমানি দৃঢ়তার নমুনা।
ইসলামের ইতিহাসে পুণ্যবতী নারীদের অন্যতম আসিয়া। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মরিয়ম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া। আর সব খাবারের মধ্যে সারিদ যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি সব নারীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি: ৩৪১১ ও মুসলিম: ২৪৩১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: হজরত মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) সারা পৃথিবীতে পুণ্যবতী দুই নারীর কথা বলেছেনে, যেখানে একজন হলেন আসিয়া। ঈমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন তিনি। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) জমিনে চারটি রেখা টেনে বলেন, ‘তোমরা কি জানো এটা কী?’ সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৯০৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সৃষ্টিজগতের মধ্যে চারজন নারী শ্রেষ্ঠ। তাঁরা হলেন, মরিয়ম বিনতে ইমরান, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ ও ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ।’ (তিরমিজি: ৩৮৭৪, আহমদ: ১২৪১৪)
আরও পড়ুন: হজরত ইবরাহিমের যে প্রশ্ন শুনে বাদশাহ লা-জওয়াব
জালেম ফেরাউনের স্ত্রী হয়েও আসিয়া পৃথিবীর ইতিহাসে ঈমানে অটল ও অবিচলতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের আসিয়ার জীবনী থেকে মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।