দাজ্জালের আগমন কেয়ামতের অন্যতম আলামত। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনা। অলৌকিক বিষয় দেখিয়ে সে মানুষের ঈমান হরণ করতে চাইবে। সে নিজেকে প্রভু দাবী করবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে, যে সম্পর্কে নবী (স.) সতর্ক করেছেন। ‘সে মানুষকে বলবে, আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই, তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে বলবে, হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।’ (সহিহ জামে আস সগির: ৭৭৫২)
কিন্তু মুমিন বান্দারা তার ভেলকিবাজিতে বিভ্রান্ত হবেন না। মিথ্যুক দাজ্জালকে তারা সহজেই চিনতে পারবেন এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমানহারা হবে। তার দলে অংশ নেবে। হাদিসের বর্ণনামতে, ‘দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি এবং নারী।’ (মুসনাদে আহমদ)। ‘ইস্পাহানের ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর।’ (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)
বিজ্ঞাপন
দাজ্জাল পুরো পৃথিবীতে ত্রাসের রাজ্য কায়েম করলেও পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। হজরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (স.) বলেছেন- ‘মক্কা ও মদিনা ছাড়া এমন কোনো শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তাআলা সব কাফের এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দেবেন।’ (বুখারি: ১৮৮১)
আরও পড়ুন: ফিতনার সময় বিশেষভাবে যা করতে বলেছেন নবীজি (স.)
আরেক হাদিসে আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত কথাসমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদীনার প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদীনার নিকটবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরণ করবে...। (বুখারি: ১৭৫৮)
উল্লেখিত হাদিসে দুই মসজিদের কথা পাওয়া যাচ্ছে। ১. কাবা শরিফ ২. মসজিদে নববি। বাকি দুই মসজিদ হলো মসজিদুল আকসা ও মসজিদে তূর। এই চার মসজিদকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা করবেন। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন অবস্থান করবে। তার রাজত্ব সর্বত্র বিস্তার লাভ করবে। তবে চার মসজিদ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। তা হলো- কাবা, মসজিদে রাসুল, মসজিদুল আকসা ও মসজিদে তুর।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৩৯)
বিজ্ঞাপন
এখানে তিন মসজিদ তথা কাবা শরিফ, মসজিদে নববি ও মসজিদে আকসা সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু মসজিদে তূর সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। সুরা তীনে ‘ওয়াতূরে সিনিন’ তথা ‘তূর পাহাড়’ এর যে কথা আল্লাহ বলছেন, সেখানকার মসজিদের কথাই বলা হচ্ছে এখানে। যেখানে মুসা (আ.)-এর সঙ্গে মহান আল্লাহর কথোপকথন হয়েছে। সেই পাহাড়টিকে বলা হয় তূরে সিনিন বা তূরে সাইনা। এখানকার মসজিদে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। এটি ফিলিস্তিন ও মিশরের মধ্যবর্তী একটি অঞ্চল। এখনও ওই অঞ্চলটিকে মদিনাতুত তূর তথা তূর শহর বলা হয়।
আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত সৌদি আরবে প্রকাশ পাবে
এখন প্রশ্ন হলো- যদি আমরা দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে চাই, তাহলে কি ওসব মসজিদে আশ্রয় নিব? এর উত্তর হলো- যদি সম্ভব হয়, তাহলে তা-ই করব। আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে নবীজির দিক-নির্দেশনা মেনে চলব। দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্ত থাকার বড় একটি উপায় হলো- সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত বা শেষের ১০টি আয়াত মুখস্থ করা। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩) আরেক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৪৬/৬)
অতএব, যারা সুরা কাহাফের প্রথম বা শেষের ১০ আয়াত মুখস্থ করবেন এবং ওগুলো তেলাওয়াত করবেন, তারা দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবেন।
এছাড়াও দাজ্জাল যেসব বিষয়ে মানুষকে ফিতনায় নিমজ্জিত করবে, সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে। দাজ্জাল মূলত ৪টি বিষয়ে মানুষকে কাবু করবে। সেগুলো হলো- ১. ঈমান, ২. ক্ষমতা, ৩. সম্পদ ও ৪. জ্ঞান। এগুলো দিয়েই সে মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবে। আপনি যদি ঈমানকে রক্ষা করতে পারেন, আপনি যদি ক্ষমতার লোভ থেকে বেঁচে থাকতে পারেন, আপনি যদি সম্পদের লোভ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন এবং জ্ঞানহীন হয়ে খেয়াখুশিমতো জীবন পরিচালনা না করেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবেন।
আর দাজ্জাল তখনই আবির্ভূত হবে, যখন মিম্বরগুলো থেকে দাজ্জালের আলোচনা উঠে যাবে। অর্থাৎ দাজ্জালের আলোচনা একসময় কমে যাবে, তখনই দাজ্জাল আগমন করবে। অতএব, আমাদের উচিত, দাজ্জালের আলোচনা করা, মিম্বরগুলো থেকে দাজ্জাল সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।