শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

নারীর আত্মশক্তি জেগে উঠুক 

জান্নাতুল যূথী 
প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২, ০৬:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

নারীর আত্মশক্তি জেগে উঠুক 

নারী কি শুধু অবহেলা, অপমান সহ্য করে দিনের পর দিন জীবনধারণ করবে? 
কেন নারীরা অন্যের দেওয়া কষ্টে বিগলিত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছে! কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কেউবা আত্মহত্যা করছে! কিন্তু নারীরা কি ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে পারে না? কেন নারীরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে আপন সত্তাকে জাগরিত করছেন না! জীবন চলার পথে অহরহ ঘটে চলা ঘটনা মনকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। 

নারীদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়া, আত্মহত্যার মতো কাজগুলো করে নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে। পরিবার-সমাজ হয়তো নারীকে সমর্থন করতে চায় না বা অনেক পরিবারে সমর্থন করে হয়তো, কিন্তু সব কথার ঊর্ধ্বে গিয়ে কথা একটাই, কাউকে কেন সমর্থন করতেই হবে? জীবন কি সস্তা! যারা নিজের ভালো না বুঝে অন্যের দেওয়া কষ্টে ধুঁকে মরছেন, তারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন অন্যপক্ষে যারা আছেন, তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না। দুঃখ-কষ্ট-ভালোলাগা-মন্দলাগা-জীবনযাপন সবটাই নারীর একার। সেখানে অন্যের ওপর ভরসা করতে নেই, তাই নিজেকে গুরুত্ব দিতে হবে। 


বিজ্ঞাপন


যুগের পরিবর্তনে নারী-পুরুষ উভয়ের জীবনে বোধ-বুদ্ধি-চেতনার অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র সবাই এখন আত্মকেন্দ্রিক। নিজেকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে পাশের মানুষটার সঙ্গেও বাড়ছে দূরত্ব। মানুষ হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক। যান্ত্রিকতার যুগে এতটা আত্মকেন্দ্রিক হওয়া সত্ত্বেও নারীরা বদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। অন্যের কাছ থেকে অবহেলা, অপমান-তুচ্ছতাচ্ছিল্যকে গায়ে মেখে নিজের জীবনকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত! কিন্তু নারীদের মনের শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে।

আজকের সময়ে যেখানে সবাই স্বার্থের জন্য পাশে থাকতে চায় আর স্বার্থে আঘাত পড়লেই দূরে সরে যায়, সেখানে নিজের আত্মশক্তির ওপর ভরসা করাই শ্রেয়। কেন অন্যকেই তার পাশে থাকতে হবে! কেন নিজের ভালো-মন্দের হিসাবটা নিজে বুঝে পথ চলতে সক্ষম নয় নারীরা। মৃত্যু অবধারিত কিন্তু তাই বলে সহজ সমাধানের পথ আত্মহত্যা? না কি জীবনের সব আঘাত ভুলে নিজেকে মূল্যায়ন করে আনন্দে জীবন উপভোগ করা! কষ্ট সবারই কম-বেশি থাকে বা আছে কিন্তু সেটাকেই কেন পুঁজি করতে হবে! নারীরা কেন এই কষ্ট-দুঃখকে ডিঙিয়ে নিজেকে ভালোবাসতে পারছেন না! আপনি খেলে আপনারই পেট ভরবে তাতে কারও কোনো উপকার বা অপকার কিচ্ছু হবে না। তবু বারবার নারী-পুরুষ উভয়ই নিজেকে গুরুত্ব দিচ্ছে না! শুধু একটি কেন্দ্রে-বৃত্তে আবর্তিত হয়ে খারাপটাকে নিয়েই মোহান্ধ হয়ে পড়ে থাকেন! জীবনকে গড়তে হলে ভাঙতেও হয় তাই ভাঙা নিয়ে কেন এত ভয়-দ্বন্দ্ব! নারীরা কেন নিজেকে এতটা তুচ্ছ ভেবে নিঃশেষ হয়ে যাবে! 

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ পারে না এমন কিছু সত্যিই আছে! একাগ্র চেষ্টা-সততা দিয়ে জীবনকে জয় করা অসম্ভব নয়। তাহলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থী প্রেম-দাম্পত্য সম্পর্কের বিচ্ছেদ বা অবনয়ন-উন্নয়নকে ঘিরে আত্মহত্যা করবেন! পৃথিবীর সবথেকে খারাপ ঘটনাও যদি ঘটে যায়। তবু কেন এতবড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে! ধরুন আপনার পাশে কেউ থাকবে না। কারণ কেউ থাকেও না কিন্তু তাই বলে আপনিই কি আপনার জন্য যথেষ্ট নন? কেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হচ্ছে না নারীরা! দশজন নারীর মধ্যে অধিকাংশ নিজেকে দোষারোপে ব্যস্ত! নিজেকে বারবার করে আত্মপীড়নে ক্ষতবিক্ষত করছেন! 

আজকের নারী আগামী দিনের সুস্থ জাতির বিবেক-ভবিষ্যৎ। তাই নারীরা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হন। নিজের ওপর আস্থা রাখুন। বিশ্বাস করুন আপনি মানুষ ও আপনার জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সেখানে অন্যের নাক কাটা গেলো নাকি সমাজের প্রথা-নিয়ম ভাঙলো তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি বাঁচুন নিজের মতো। সৎ-থে সততার সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করুন। দিনশেষে নিজের হয়ে উঠুন। ডিপ্রেসন, আত্মহত্যার মতো জঘন্য মানসিকতাকে পরিহার করুন। নিজেকে কাজে ব্যস্ত করে তুলুন। দিনশেষে নিজের জন্য ভালো ভালো চিন্তা একত্রে করুন আর প্রাণখুলে হাসতে শিখুন। যতদিন মানুষ হিসেবে নিজেকে শক্তিশালী মনে না করবেন,ততদিন হতাশা নামক যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি মিলবে না। 


বিজ্ঞাপন


প্রাণশক্তিকে জাগ্রত করার এখনই সময়। নিজের ওপর ভরসা-বিশ্বাস কোনো সময় হারানো যাবে না। মানুষ জন্মের সময় দুটি হাত, দুটি পা নিয়ে এসেছে। আপনার এক হাত আর এক হাতকে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। আপনি কেন অন্যদের ভরসা করবেন, সে নারী বা পুরুষ; যা-ই হোক। তাই আস্থা সেভাবেই গড়ে তুলুন নিজের ওপর। আর খারাপ সময় খারাপ দিন আসে-যায়। এটা জোয়ার-ভাটার মতোই। তাই দুঃখ  এলে ধৈর্যশীল হোন। দেখবেন, আপনিই একদিন বিজয়ের মালা গলায় পরতে পারবেন। তাই আত্মশক্তিকে চিনতে শিখুন, বুঝতে শিখুন।

লেখক: গবেষক-শিক্ষক, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়

একেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর