রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে করমুক্ত সুবিধার সুযোগ নিয়ে এক করদাতা ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। সোমবার (১৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও গণমাধ্যমের সঙ্গে বিসিএস কর ক্যাডারদের মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
দেশে প্রত্যক্ষ কর বাড়লেও অর্থনৈতিক বৈষম্য না কমে বাড়ছে কেন— এই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আইন করলাম যে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা যারা কঠোর পরিশ্রম করে বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। আমরা বললাম, তাদের এই আয়টা ট্যাক্স ফ্রি হবে বাংলাদেশে। এটা প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করবে। তারা যাতে করে বিদেশের রোজগারটা বাংলাদেশে ফরমাল চ্যানেলে পাঠায় এবং আমাদের রিজার্ভে কন্ট্রিবিউট করে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এই সুযোগের অপব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু আপনারা শুনলে আশ্চর্য হবেন, এমন ট্যাক্সপেয়ার পাওয়া গেল, যিনি ৭৩০ কোটি টাকা নিয়ে আসলেন এবং তিনি বলছেন, এটা উনার ওয়েজ আর্নার্স এবং এটা ট্যাক্স ফ্রি।
এনবিআর চেয়ারম্যান যোগ করেন, এই যে আপনারা প্রশ্ন করলেন কেনো গিনি কোইফিশিয়েন্ট উল্টো দিকে হাঁটছে, তার কারণ হচ্ছে এই। হয় আমরা এগুলো দেখি নাই, অথবা বুঝি নাই। অথবা দেখেও না দেখার ভান করছি। তাদের আমরা এলাউ করেছি। এগুলোই আমাদের বড় প্রবলেম।
সেই করদাতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশনগুলো তো নিতে হবে। অ্যাকশনগুলো নেওয়ার পরে তখন অটোমেটিক্যালি আপনারা নাম জেনে যাবেন। যখন আপনি দেখবেন যে, লাইমলাইটে চলে আসছে, তখন আপনারা জানবেন।
তিনি আরও বলেন, আইনকানুন যেভাবে হয়েছে সেভাবে ইমপ্লিমেন্ট হয় নাই। আমাদের এখন ১ কোটি ১৩ লাখ ট্যাক্সপেয়ারের সংখ্যা আছে। আপনারা হিসেব করলে দেখবেন। ট্যাক্স রিটার্ন দিবেনই বা কেনো, ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে যদি শান্তিতে থাকা যায়, কোনো ঝুট-ঝামেলা না হয়, উল্টো যারা রিটার্ন দিচ্ছে, তারাই ঝামেলায়.. খেয়াল করেন।
বিজ্ঞাপন
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আপনি ১ কোটি ১৩ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে ৪০ লাখ রিটার্ন দেয় বাকি ৮০ লাখের ওপর দেয় না। তাহলে রিটার্ন না দিয়েই যদি শান্তিতে থাকা যায় তাহলে যারা রিটার্ন দিচ্ছে, ওদের বরং প্রশ্ন করা উচিত, আপনি রিটার্ন দেন কেন? তার মানে হলো, আমাদের যে কাজগুলো করার কথা মাঠ পর্যায়ে, এনফোর্সমেন্ট যেটা করার কথা সেটা আমরা করছি না পুরোপুরি। সেই কারণেই এই প্রবলেমগুলো হচ্ছে এবং সেই কারণেই উল্টো ফল হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান সামনের দিনে ব্যাংকের সাথে এপিআই করে অটোমেটিক কর তথ্য নেওয়ারও আশা তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে করদাতার আমানত, কত টাকা উৎসে কর কাটা হয়েছে, তার মৌলিক তথ্য রিটার্ন জমার সময় চলে আসবে।
করদাতার ভয়ভীতি দূর করা, বিভিন্ন সরকারি আন্তঃসংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের সদিচ্ছা বাড়ানো ও আমদানি-রফতানিসহ কর সংক্রান্ত সকল হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত অনলাইনে প্রকাশের অনুরোধ করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মহাসচিব সৈয়দ মহিদুল হাসান।
/এফএ