রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঈদযাত্রায় রাতভর ‘দুর্ভোগ’ গাজীপুরে

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:২২ এএম

শেয়ার করুন:

ঈদযাত্রায় রাতভর ‘দুর্ভোগ’ গাজীপুরে

উত্তরা জসিমউদ্দিন থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের গাজীপুরের পোড়াবাড়ি পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। যেকোনো সময় ছুটির দিনে এই পথে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। আর যানজট থাকলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। তবে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের নাড়ির টানে ছুটে চলায় ২২ কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতে লাগছে প্রায় ৪ ঘণ্টা, বাস কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি সে যাই হোক। এমনকি মোটরসাইকেলে হলেও অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুর সড়কে কোনো যানজট ছিল না। তবে বিকেলের পর থেকে তা বাড়তে থাকে। আর রাত নামতেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের পোড়াবাড়ি পর্যন্ত গাড়িগুলোকে কোথাও থেমে চলতে দেখা যায়, আবার কোথাও একেবারেই থেমে ছিল যানবাহনগুলো। রাত যত গভীর হয়েছে, পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে যানজট।


বিজ্ঞাপন


Eid Journeyঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বৃহস্পতিবার রাতভর গাজীপুরে এমনই দুর্ভোগ ছিল। সরেজমিনে তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে অনেক নারী ও শিশুকেই গাড়িতে বমি করতে দেখা গেছে। আবার অনেককেই গাড়ির অপেক্ষায় রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। রাজধানীর মহাখালী থেকে এ দিন গাজীপুরের মাওনা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ৫ ঘণ্টা। যা অন্যসময়ে দুই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া যায়। এরমধ্যে আব্দুল্লাহপুর থেকে পোড়াবাড়ি পর্যন্ত তীব্র যানজটে গাড়ি স্থবির ছিল দীর্ঘ সময়।

গত ১৯ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি হলেও ২০ এপ্রিল খোলা ছিল অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে গাজীপুর এলাকায় অনেক শিল্পকারখানা খোলা ছিল, যাদের বন্ধ হয়েছে এ দিন। ফলে অফিস শেষে সবাই বাড়ির পথ ধরেন। আর এতেই চাপ বাড়ে এই রুটে। এছাড়াও অনেকে তীব্র গরমের কারণে রাতের যাত্রা বেছে নিয়েছেন, সে কারণেও কিছুটা বাড়তি ভিড় ছিল।

এদিকে, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মিলেছে গণপরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে। ফলে অনেককেই গণপরিবহন ছেড়ে কম ভাড়ায় খোলা ট্রাক কিংবা পিকআপে চড়েও ঝুঁকি নিয়ে রওয়ানা হতে দেখা গেছে গন্তব্যের উদ্দেশে।

Eid Journeyরাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সদস্যরাও চেষ্টা করছিলেন আপ্রাণ, কিন্তু ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি রাতের যাত্রীদের। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সৌখিন পরিবহনে বাড়ি যান হাসান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। মোবাইলে তিনি জানান, কোথাও কোনো যানজট নেই সাড়ে তিন ঘণ্টায় ময়মনসিংহ শহরে আসতে পেরেছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


এই পথে চলা সোনার বাংলা পরিবহনের এক চালক বলেন, সকাল নয়, দুপুরের পরও এই সড়কে যানজট ছিল না। তবে ইফতার পর থেকে মানুষের ভিড় বেশি।

শুধু ময়মনসিংহগামী নয়; ঢাকামুখী পরিবহনগুলোকেও বৃহস্পতিবার রাতে সড়কে যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ের উল্টোপাশে রাত ১টায় দেখা যায় ঢাকাগামী পরিবহনের দীর্ঘ সারি। এতে রাত ১১টায় টঙ্গি কলেজ গেইট থেকে তীব্র যানজটের পথ পাড়ি দিয়ে পোড়াবাড়ি পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা।

Eid Journeyকলেজগেট এলাকায় কথা হলে আলম এশিয়া পরিবহনের চালক ঢাকা মেইলকে বলেন, সকালে ঢাকা থেকে গিয়ে যাত্রী রাইখা আবার নিয়া যাচ্ছি। এত জ্যাম, দুপুরের সঙ্গে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।

ভোগড়া বাইপাসে বাস থেকে নেমে সড়কের পাশে বসে ছিলেন আফরোজা বেগম। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলে হৃদয় একটি পত্রিকা দিয়ে বাতাস করছিলেন। জানতে চাইলে হৃদয় বলেন, আম্মার শরীর খারাপ লাগছে, বমি করেছে। যানজটের কারণে আর গরমে কাহিল হইয়া গেছে।

একই জায়গায় কথা হয় পাবেল মিয়ার সাথে, যাবেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা। সন্ধ্যা ৮টার পরেই বাস ছেড়েছে মহাখালী টার্মিনাল থেকে। সবে গাজীপুর বাইপাসে এসেছে, এতেই রাত ১২টা পার হয়ে গেছে। বাড়ি যাবেন কখন, রাস্তায় কোথায় সেহেরি খাবেন- সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাবেল।

এদিকে, সালনা পোড়াবাড়ি এলাকায় অনেক মানুষকেই যানজটের মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে যেতে দেখা যায়। পরে আশপাশের দোকান থেকে রুটি-কলা, কেক, বিস্কুট কিনে আবারও গাড়িতে উঠতে দেখা যায় তাদের। রাত দুইটায় এমন দৃশ্যের কারণ সবারই সেহরির চিন্তা, একটু পর সেহেরির খাবার হিসেবে গাড়িতে বসেই এই রুটি-কলা খাবেন সেই চিন্তাতেই এমনটা করেন অনেকে।

Eid Journeyশেরপুরগামী ‘সোনার বাংলা’র যাত্রী আফজাল বলেন, ‘রোজাতো আর বাদ দেব না, তাই কলা-রুটি কিনে নিলাম। আমাদের কপালটাই খারাপ, বুঝলেন। ৫ ঘণ্টার বেশি জ্যাম ঠেলে গাড়ি এখনো গাজীপুরে সালনা। কবে যাবো শেরপুর আল্লাহ ভালো জানেন। রাত দেখে একটু পরিবেশটা ঠান্ডা, নয়তো গরমেই সিদ্ধ হয়ে মরে যেতাম।’

এ দিন রাত ২টার পরও গাজীপুরের টঙ্গি, চেরাগ আলী, কলেজগেট, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও বাইপাস সালনা, পোড়াবাড়ি এলাকায়ও তীব্র যানজট ছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাত সাড়ে ৪টার সময়ও ভোগড়া বাইপাস থেকে গাজীপুর হয়ে সালনা পোড়াবাড়ি পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট।

এদিকে, ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া দাবির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে। ফলে যাদের পকেটে টান, তারা অতিরিক্ত ভাড়া এড়াতে ট্রাক-পিকআপে চড়েই ছুটছেন গন্তব্যে। তবে যারা পিকআপে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে গরমের তেমন অস্বস্তি নেই। আর যেকোনো সড়কেই মোটরসাইকেলে যাতায়াত করাদেরও খুববেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। কারণ, একটু সরু গলি পেলেই এদিক-সেদিক করে বাইকাররা খানিকটা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। তবে এরপরও মোটরসাইকেলেও ঈদযাত্রায় অন্যসময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি সময় লেগেছে।

Eid Journeyত্রিশাল যাবেন আশরাফুজ্জামান সজিব। রাত দুইটায় সালনায় জ্যামে আটকা পড়েছেন। কথা হলে সজিব বলেন, আমি মগবাজার থেকে ১০টায় বের হয়ে এই পথ আসছি ৪ ঘণ্টায়। বাইক বের হয়ে যাবে, সে উপায়ও নেই। কোথাও তো গাড়ি সামনেই আগায়নি। একটু ফাঁক-ফোকর পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। তবে সামনে কোনো বড় গাড়ি থাকলে এই সুযোগ তৈরি হয় না, যদি বড় গাড়িটি একটুও এগুতে না পারে।

এদিকে, রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্তও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে টঙ্গি থেকে শুরু করে মাওনা, জৈনা পর্যন্ত এমনকি ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত অসংখ্য যাত্রীদের ব্যাগ হাতে রাস্তায় বাসের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যানজটের কারণে সামনের দিকে গাড়ি আসছিল কম। এ কারণে নিজেদের টিকিট কেটে রাখা বাসের অপেক্ষায় পরিবার-স্বজন নিয়ে সড়কেই অবস্থান করছিলেন তারা। এরমধ্যে যাদের আগেথেকে টিকিট কাটা ছিল না তাদের অনেককেই পিকআপ বা ট্রাক আসলেই দামাদামি করতে দেখা যায়, ভাড়া বনলে কাউকে আবার উঠেও পড়তে দেখা যায়।

পরিবার নিয়ে খোলা ট্রাকে ওঠা সবুর মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি কারখানায় কাজ করি। বোর্ডবাজার থেকে বাসে ৪ থেকে ৬ জন পিকআপে উঠছি। দুইশ’ করে নেবে। গরিব মানুষ, যাইতে পারলেই হইলো। দাম কম হলে আমাদের জন্য আরও ভালো।

গাজীপুর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, হঠাৎ বাস ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে পুলিশের বেশ কয়েকশ সদস্য যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সদস্যদেরও কাজ করতে দেখা গেছে।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর