আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ঘরমুখো রেলযাত্রীদের চাপ সামলাতে নানান সংকটের মধ্যেও রেকর্ড সংখ্যক কোচ মেরামত করা হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। সকাল-বিকাল সমানতালে কাজ চলছে।
এবারের ঈদযাত্রায় ১০০টি কোচ সংযুক্ত করতে যাচ্ছে কারখানাটি। এরমধ্যে ৮৩টি ব্রডগেজ, ১৭টি মিটার গেজ কোচ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় পুরোনো ট্রেনকে নতুন করার কাজ চলে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে। ব্রিটিশ সরকার ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি স্থাপন করে। কারখানার যান্ত্রিক শাখায় ২ হাজার ৮৫৯ জনবলের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৬২১ জন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জিওএইচ, উৎপাদন মেশিন শপ, ক্যারেজ শপ, হুইল শপ, বগি শপ ও সিএইচআর শপ ঘুরে দেখা গেছে, চলছে নষ্ট হয়ে যাওয়া বগি মেরামত। কেউ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, কেউবা ব্যস্ত চাকা মেরামতে। আবার কেউ ওয়েল্ডিং ও কোচের সিট মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কোথাও আবার মেরামত করা বগিকে নতুন করে রঙ লাগিয়ে চকচকে করে তোলা হচ্ছে। যেন দম ফেলার সময় নেই। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও কাঁচামালের অভাবে কর্মযজ্ঞ কিছুটা বাধাগ্রস্ত।
মেরামত করা এসব কোচ ঈদের বিশেষ ট্রেনগুলোতে সংযুক্ত করা হবে। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ চলছে কারখানার ২৪টি বিভাগে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত হওয়া ৭০টি বগি চলে গেছে রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের কাছে।

ক্যারেজ শপের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ছোবাহান আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গাড়ির যাবতীয় কাজ করছি। অচল গাড়িকে আমরা সচল করে থাকি। আমাদের কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে, আগে যে পরিমাণ আউটটার্ন যেত তার দ্বিগুণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে খুব আন্তরিক। আমাদের ওভারটাইম, হলিডেসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে আউটটার্ন নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কষ্টের বিনিময়ে মানুষ শান্তিমতো ঈদ করতে পারবে, ঘরে ফিরতে পারবে- এটাই আমাদের সফলতা।
পেইন্ট শপের শহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, কাজের চাপ এত বেশি যে বলার মতো না। আমাদের লোক সংকট, যার কারণে আউটটার্ন ঠিকমতো দিতে পারছি না। সীমিত লোক নিয়ে গাড়ি আউটটার্ন দিচ্ছি আমরা। বাংলাদেশের বহুলোক বহু জায়গায় নিজ নিজ গন্তব্যেস্থলে যাবে, গাড়িতে টিকেট কেটে যাবে। এটা আমাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। এটা আমাদের গর্ব। আমরা একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। সেবা দেওয়াটাই আমাদের কর্ম।

বগি শপের ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, পহেলা মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল আমাদের কর্মযজ্ঞ। টার্গেট ৪০ দিনে একশ কোচ। এই টার্গেট আমরা সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ চালাই। কারখানায় অনেকগুলো শপ আছে। একটা শপ আরেকটা শপের ওপর নির্ভরশীল। জিনিসটা এমন- কেউ যদি একদিন মিস করে অন্যদিকে পিছিয়ে যাওয়া লাগে।
ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরমুখো যাত্রীদের একটা প্রত্যাশা ও চাপ থাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওপরে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কোচ আমরা আউটটার্ন দিতে সক্ষম হয়েছি। ১৮ এপ্রিলের মধ্যে বাকি ৩০ শতাংশ আউটটার্ন দিতে সক্ষম হব আশা রাখছি।

জিওএইচ শপের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, অল্পসংখ্যক জনবল দ্বারা আমরা কাজগুলো সম্পূর্ণ করে থাকি। আমার এখানে মঞ্জুরি ১৩৯ জন, আছে মাত্র ৩৭ জন। এছাড়াও কিছু অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। আমরা অন্য সময় যে কোচ আউটটার্ন দিয়ে থাকি তার দ্বিগুণ বর্তমানে হাতে নিয়েছি।
কারখানার শিডিউল দফতরের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) রুহুল আমিন রুবেল ঢাকা মেইলকে বলেন, ইতোমধ্যে ৭০% কোচ মেরামত করে ডিভিশনে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো ১৮ এপ্রিলের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের সমস্যাগুলো এখনও বহাল আছে। কিন্তু ঈদের সময় যাতে যাত্রীরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য শ্রমিকরা উৎফুল্ল হয়ে কাজ করছেন। অনেক সময় তাদেরকে কাজের জন্য বলা লাগে কিন্তু বর্তমানে স্বপ্রণোদিত হয়ে অতিরিক্ত কাজগুলো করে।
টিবি/এমএইচএম/জেএম



























