ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে নৌ, রেল ও সড়কপথে। এবারের ঈদযাত্রায় সাভারের ব্যস্ততম বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের যানজটে আটকে পড়াসহ দুর্ভোগের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি দিয়ে দেশের উত্তরবঙ্গের প্রায় ১৬ জেলার লাখো মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সড়কজুড়ে খান্দ-খন্দ আর ধুলাবালির আস্তরণের কারণে সড়কটিতে স্বাভাবিক যান চলাচল অনেকটা ব্যহত। তার ওপর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের কারণে সড়কে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ত এই সড়ক খানাখন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের জামগড়া, জিরাবো ও ইউনিক এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এ সড়ক ব্যবহারকারীদের। বাইপাইল মোড়ে আশুলিয়া হয়ে ঢাকার আবদুল্লাহপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস, ট্রাক, লেগুনাসহ বিভিন্ন পরিবহন জটলা করে সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনচালিত রিকশাগুলো এলোমেলোভাবে সড়কে চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশের নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউই। যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করে রাখায় কিছু দূর পরপরই যানজট দেখা দিচ্ছে। বাইপাইল থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত এভাবেই চলতে হয়। যদিও যানজট না থাকলে এই সড়ক পাড়ি দিতে লাগে ১৫–২০ মিনিট।

সড়কের কয়েকটি স্থানে এরই মধ্যে পিচঢালাই উঠে গেছে। জামগড়া ও জিরাবো এলাকায় বিছানো হয়েছে ইট। বৃষ্টি হলে সড়কের এই দুই অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। সড়কের মাঝামাঝি ইউনিক এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমে হাঁটু পানি। এছাড়া সড়কের উভয় পাশে ফুটপাতসহ অবৈধ দোকানপাটের কারণে পায়ে চলাচলেও ভোগান্তির শেষ নেই।
এই সড়কে বাস চালানো খুবই কষ্টকর বলে জানালেন একাধিক বাসচালক। তাদের দাবি, যানজটের আর এবড়োথেবড়ো সড়কে ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের গালি ও কটুকথা শুনতে হয়। ৩০ মিনিটের রাস্তা পার হতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়। ঈদের সময় এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
বিজ্ঞাপন
এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, এই সড়ক দিয়ে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করার কারণে সড়কগুলোর অবস্থা করুণ। বেহাল দশার জন্য এ সড়ক দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। প্রতিদিনই যানজটে আটকে থাকতে হয়। যেহেতু সামনে ঈদ, তাই যানবাহনের চাপ আরও দুই থেকে তিনগুণ বাড়বে। এসব কারণে আসন্ন ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সড়কের তীব্র ধুলোবালিতে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। রাস্তার খানাখন্দ ও যানজটের কারণে আমাদের ৪০ মিনিটের যাত্রার পথ দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। তারা ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করার দাবি জানান।
সড়কটি এখন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অধীন। ২০২১ সালে প্রকল্পের স্ট্যাটিক লোড টেস্টের পাইলট পাইল বোরিং কাজের উদ্বোধনকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, বর্তমানে যে রাস্তাটি আছে, এটা যেভাবে আছে থাকুক। অনেক মানুষ বিকল্প পথ হিসেবে এটি ব্যবহার করে। এখানে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাস্তা যেন ব্যবহারের উপযোগী থাকে।

কিন্তু সড়কটি অবহেলাতেই পড়ে আছে। মূল সড়কের প্রয়োজনীয় বড় ধরনের সংস্কার কাজগুলো এক্সপ্রেসওয়ে কারণেই আটকে আছে। দেশের ব্যস্ত এই সড়কটি এখন ইট সুরকির জোড়াতালি দিয়েই চলছে। এছাড়া উড়াল সড়কের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিচের এই সড়ক চলবে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে, এমন আভাস মিলল প্রকল্প থেকে।
এ বিষয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ইতিমধ্যে ঈদে ঘরমুখী মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সড়কের সমস্যা সমাধান করতে। এছাড়া সড়কের কোথাও কোথাও ইট বিছানোর বিষয়টি গত ৫ বছর ধরেই আছে। উড়াল সেতু হলেও নিচের সড়কও তো প্রয়োজন। আমরা প্রকল্পের শেষে বা মাঝপথে সড়ক ৪ লেনের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। গত ঈদও আমরা পার করেছি, আমাদের আশা এবারের ঈদও সুন্দর মতো করতে পারব।
টিবি



























