আর কয়েকদিন পরই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২২ বা ২৩ এপ্রিল উদযাপিত হবে খুশির ঈদ। আনন্দের এই উৎসব স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে অনেকেই রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হন। অনেকেই এরইমধ্যে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে মূল ঈদযাত্রা শুরু হবে ১৯ এপ্রিল থেকে।
খুশির এই উৎসব সবার সঙ্গে উদযাপনের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম মাধ্যম সড়ক ও রেলপথ। রেলের শতভাগ টিকিট এবার অনলাইনে হওয়ায় সড়কপথে চাপ বেশি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ উন্নয়নের পরও ভোগান্তির শঙ্কা থাকছে। ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন সড়ক সংস্কার শুরু হয়েছে। যদিও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আশ্বস্ত করেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো।
বিজ্ঞাপন
এক বছর আগে সারা দেশে বেহাল সড়ক ছিল ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি, যা মোট সড়কের ১০ ভাগ। মেরামতের টাকা না পাওয়ায় আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে এসব সড়ক। এখন ঈদ ঘিরে বাধ্য হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এসব সড়ক সাময়িক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে সওজের ১০টি জোনের আওতায় পাঁচটি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। এরই মধ্যে সড়ক সংস্কারের কাজ হয়েছে। ২৫ রোজার মধ্যে সারা দেশের সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।
সড়ক ও জনপথের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যার এটি নিয়েই সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। আমরা সাপোর্ট দিচ্ছি। কিভাবে বেশি খারাপ রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত করা যায়, সেই কাজও চলছে। সর্বশেষ আমাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্যারও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি ভোগান্তি থাকবে না।
২০১৩ সালে দেশে ভালো সড়ক ছিল মোট সড়কের মাত্র ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। সাত বছরের ব্যবধানে ভালো সড়কের দৈর্ঘ্য বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। সওজের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে সড়ক ও মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানিয়েছেন, সড়কের জন্য কোথাও যাতে জনদুর্ভোগ না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি এবং মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের সড়ক-মহাসড়ক অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো। এয়ারপোর্ট-জয়দেবপুর বিআরটি প্রকল্পের এয়ারপোর্টের সামনের ওভারপাস ঈদের আগে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং টঙ্গী ব্রিজেও আশা করি সমস্যা হবে না। ঢাকা মহানগরী এবং ঢাকা জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় যানজট প্রবণ ৪৬টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। ঈদের আগে ৭ দিন ও পরে ৭ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
বিজ্ঞাপন
এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানী থেকে সড়কপথে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হতে পারে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যাত্রীদের ভোগান্তি হতে পারে হেমায়েতপুর, সাভার বাজার, নবীনগর ও আরিচা ঘাট এলাকায়। ঢাকা থেকে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহের পথে ভোগান্তি শঙ্কা রয়েছে টঙ্গীর স্টেশন রোড, এরশাদনগর, ভোগড়া বাইপাস ও জয়দেবপুর চৌরাস্তায়। ঢাকা থেকে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল হয়ে বগুড়ার পথে তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে সাভারের বাইপাইল, চন্দ্রা, চান্দিনা, এলেঙ্গা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত এবং সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে। সড়ক ও জনপদ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর স্টেশন রোড, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ও এলেঙ্গা এলাকায় সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ চলছে।
এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট যাওয়ার পথে মদনপুর, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, কাচপুর সেতু ও মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা থেকে তিনশ ফিট এলাকা হয়ে নরসিংদী যেতে কাঞ্চন সেতু ও ভুলতা গাউছিয়া মোড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণের পথে বড় যানজট হতে পারে পদ্মা সেতুর দুই পারে। ঢাকা থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ অংশ, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পদ্মা সেতু সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা অংশে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
সওজের রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল হাসান জানিয়েছেন, ঈদের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে সড়কের বেহাল দশা সেখানে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে, যেন যানজট না হয়।
ঈদ উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য করণীয় ঠিক করতে সভা করেছে সংশ্লিষ্টরা। ৯ এপ্রিল বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ের ওই সভায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে বিমানবন্দর সড়ক বিশেষ করে গাজীপুর এলাকা স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিতে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নবীনগর ও চন্দ্রার যানজটের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, সেখানে রাত পার হয়ে ভোর হয়ে যায়। সড়কে আনফিট গাড়ি থাকে। চালক অতিরিক্ত গাড়ি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই সময় নষ্ট হয়।
এসময় তিনি গাজীপুরের পাশাপাশি এলেঙ্গা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া সড়কে বাধাহীন চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। ঈদযাত্রার সময় টোল প্লাজাগুলোতে টোল আদায়ের ধীরগতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান তিনি।
এদিকে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, দুইটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আমি মনে করি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। এখনো সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়ি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না, এটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলায় তা এবারের ঈদযাত্রায় অস্বস্তির কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন এ পথের পরিবহন চালকরা। হানিফ পরিবহনের চালক সবুর মিয়া ঢাকা মেইলকে জানান, গাড়ি আস্তে আস্তে চালাতে হয়, গর্ত আছে কিছু জায়গায়। কয়েকদিন ধরে গর্ত ভরাট করতেছে। ঈদের সময় গাড়ি বেশি, জ্যামও বেশি হতে পারে।
রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ রুটের সৌখিন পরিবহনের সুপারভাইজার শামিম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, শুক্রবার ছাড়া যেকোনো দিন গাজীপুর পার হতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। একই সড়কে চলাচলকারী এনা পরিবহনের এক চালক বলেন, দুই ঘণ্টায় গাজীপুর পার হলেও চলে। কিন্তু অনেক সময় আরও বেশি লেগে যাচ্ছে। ঈদে সেই সময় আরও বাড়তে পারে।
ডব্লিউএইচ/জেএম



























