রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিনা টিকিটের যাত্রী ঠেকাতে ‘বাঁশের বেড়া’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বিনা টিকিটের যাত্রী ঠেকাতে ‘বাঁশের বেড়া’

কিছুদিন আগেও ট্রেনের টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এর সঙ্গে ছিল কালোবাজারি। এসব সমস্যা পেরিয়ে ঈদে ট্রেনের টিকিট পেলেও রেলভ্রমণে স্বস্তি ছিল না। তার সঙ্গে ছিল বগি ও ছাদবোঝাই বিনাটিকিটের যাত্রী। এবার এসব সমস্যা ঠেকাতে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে। কালোবাজারি এড়াতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’- এটি নিশ্চিত করতে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কেনার আগে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজন যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না। যার টিকিট তাকেই যেতে হবে এবং তার সাথে যারা যাবেন তাদের নামও টিকিটে উল্লেখ থাকছে।

এতকিছুর পরও এবার কমলাপুর রেলস্টেশনে যেন টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রী প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। প্রতি বছরই ঈদযাত্রার ট্রেনে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ যাত্রী উঠেন। বগির ভেতরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যান বিনাটিকিটের অসংখ্য যাত্রী। এমনকি এসি বগি ও কেবিনেও ওঠেন তারা। ছাদে, ইঞ্জিনের সামনে, দরজায় দাঁড়িয়েও ভ্রমণ করেন অনেক যাত্রী। রেলের কর্মীরাও টাকা নিয়ে বিনাটিকিটের যাত্রী তোলেন- এমন অভিযোগও নিয়মিত পাওয়া যায়। এতে টিকিটধারী যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।


বিজ্ঞাপন


Railএবার বিনা টিকিটের যাত্রী যাতে প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্য দেওয়া হয়েছে বাঁশের বেড়া। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, স্টেশনের প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। কয়েকটি লাইনে দেওয়া হচ্ছে এ বাঁশের বেড়া, যেখান থেকে যাত্রীদের টিকিট চেকিং করা হবে।

ঈদের আর ৯ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত যাত্রী চাপ নেই রেলওয়েতে। স্টেশন ছিল না তেমন যাত্রী। সকাল সাড়ে ৬টায় উত্তরবঙ্গের চিলাহাঁটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ছিল একেবারেই ফাঁকা। অন্য সাধারণ দিনের মতোই ছিল যাত্রী।

Railসকালে রেলস্টেশনে কয়েকজন যাত্রী ঢাকা মেইলকে জানান, এখন পর্যন্ত খুব স্বাভাবিকভাবেই যাওয়া যাচ্ছে। দুই-তিনদিন পরে ট্রেনে ভিড় শুরু হবে। তাই আগেভাগে বাড়ি যাচ্ছেন তারা। স্টেশনে স্বজনদের ট্রেনে তুলে দিতে আসা রুবেল বলেন, এখন ট্রেনে যাত্রী চাপ নেই। তাই পরিবার-পরিজনকে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি ৩-৪ দিন পরে যাব। তখন কি অবস্থা হবে কে জানে!

আরেক যাত্রী বলেন, গতবার ট্রেনের টিকিট কাটতেই পারিনি। প্রচুর ভিড় ছিল। এবার সহজেই টিকিট পেয়েছি। তাই একটু আগেভাগেই বাড়িতে যাচ্ছি। এবার যে সিস্টেম করছে, খারাপ না। আগে টিকিট ব্ল্যাকারদের হাতে চলে যেত। এবার মনে হয় তারা সুযোগ পাচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


এবার ঈদযাত্রা খুব কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, এবার ছাদে ভ্রমণ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মাঠে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মানুষের চাপ থাকায় হয়তো ট্রেনের ভেতরে টিকিট চেকিংটা কষ্টকর হবে। তবুও এটা আমাদের করতে হবে। আমরা এন্ট্রিতে চেকিং করব। কমলাপুরে কিন্তু দুবার চেকিং হবে। বিমানবন্দরেও প্রবেশের সময় টিকিট চেক হবে। আমরা টিটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

Railরেল সচিব বলেন, ঈদের সময় ট্রেনে ওঠানামা নিয়ে সমস্যার কথা শোনা যায়। একটা অভিযোগ আছে আমাদের বিরুদ্ধে যে টিকিট কাটার পরও যাওয়া যায় না। স্বাভাবিক যে ঈদের সময় চাপ পড়ে সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কোনোভাবে ট্রেনের ছাদে যাতে কেউ না উঠতে পারে। বিশেষ করে কমলাপুর-বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশনে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের ওপর বেশি জোর দিয়েছি। এখানের যাত্রীরা কিভাবে সহজে ঢুকতে পারে, সেজন্য আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রবেশমুখে আমরা ব্যারিয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা নেব।

হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের অনেক জায়গায় অরক্ষিত পকেট গেট বন্ধ আছে, সেখানে যথেষ্ট ফোর্স মোতায়েন করা হবে, যাতে কেউ উঠতে না পারে। টিকিট কাটা হোক আর না কাটা যাত্রী হোক সবাই যেন প্রবেশপথ দিয়ে যায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্রেনের ভেতরেও স্ট্যান্ডিং যাত্রী ঈদের সময় যেহেতু অ্যালাউ করতে হয় তারা যাতে যত্রযত্র ঘোরাফেরা করতে না পারে, আবার শোভন চেয়ারের টিকিট কেটে কেউ যাতে এসিতে যেতে পারে সেজন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি এবার ট্রেনে ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।

Railএদিকে শতভাগ অনলাইনে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। প্রথমদিকে ঈদের টিকিট অনায়াসে পাওয়া গেলেও ঈদের ১ থেকে ৪ দিন আগের টিকিট পেতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। টিকিট প্রত্যাশীদের চাপে গত ৮ এপ্রিল সার্ভারে জটিলতা দেখা। এতে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে টিকিট কাটতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ঈদের ৩-৪ দিন আগের টিকিটের। তাই এই সময় একটু ঝামেলা হয়। ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রির শেষদিন মঙ্গলবার সকালের (২১ এপ্রিল) টিকিট বিক্রি শুরু হয় সকাল ৮টায়। সার্ভারে প্রথম ৪০ মিনিটে আড়াই কোটি হিট পড়ে। অথচ সিট সংখ্যা ২৯ হাজারের মতো। তাই সার্ভারে সমস্যা হয়।

টিএই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর