সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রথমবার কোরআন তেলাওয়াত শুনলে মানুষের যা হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রথমবার কোরআন তেলাওয়াত শুনলে মানুষের যা হয়

কোরআনুল কারিম মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম। এর মধুর তেলাওয়াত কঠিন হৃদয়েও ঢেউ খেলে যায়। কি মুশরিক, কি কাফের সবাইকেই আকর্ষণ করে দয়াময় প্রভুর পবিত্র কালাম। যিনি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার স্রষ্টা, সবাইকেই যিনি নানা অনুকম্পায় ঘিরে রেখেছেন সেই মহামহিম পবিত্র সত্ত্বার কালাম সৃষ্টিকে নাড়া দেওয়ারই কথা। আসলে সেটাই হয়।

পবিত্র কোরআন শুনে বিগলিত হওয়ার উদাহরণ অনেক। হজরত ওমরের মতো কঠিন মানুষও যিনি নবীজিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, তিনিই প্রথমবার কোরআন শুনে কুপোকাত। উনার মতো অনেক সাহাবি যারা কিনা কোরআন নাজিলের সংবাদেই বিরোধিতা শুরু করেছিলেন, পরে তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কোরআনের তেলাওয়াত শুনে। বর্তমান যুগেও তেলাওয়াত শুনে ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা প্রতিদিনকার ঘটনা। বিশ্বের কোথাও না কোথাও ‘কোরআন শুনেই ইসলাম গ্রহণ’ এরকম খবর পাবেনই।


বিজ্ঞাপন


এটি আসলে পবিত্র কোরআনেরই একটি মোজেজা। নবীজির যুগে কাফের-মুশরিকরা পবিত্র কোরআনের বিরোধিতা করলেও গোপনে সেই কোরআনেরই মুগ্ধ শ্রোতা ছিল। নবীজি যখন প্রকাশ্যে নামাজে কোরআন তেলাওয়াত করতেন তখন তারা দূরে সরে যেত। কিন্তু দূর থেকে ঠিকই আড় কানে চুপিচুপি শোনার চেষ্টা করত। যখন কেউ দেখে ফেলত, আস্তে করে কেটে পড়ত। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া: ৪/১৬৪)

আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ও আখনাস ইবনে শারিকের মতো মুশরিক সরদাররা লোকচক্ষু ফাঁকি দিয়ে নবীজির কোরআন তেলাওয়াত শুনত। রাতে নবীজির ঘরের বাইরে ঘাপটি মেরে বসে কান পেতে থাকত তারা। কারো কথা কেউ জানত না। এক ভোরে অপ্রস্তুত অবস্থায় মুখোমুখি হয়ে গেল তিন জন। সবাই সবার কাছে ধরা খেয়ে গেল। তিনজনই একই অপরাধের অপরাধী! দিনভর যেই কোরআনের বিরোধিতায় তারা জোর প্রচারণা চালায় তারাই কি না রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে এভাবে কোরআন শুনতে আড়ি পেতে বসে! সাধারণ জনতা ব্যাপারটা টের পেলে কোরআনের প্রতি আরো ধাবিত হয়ে পড়বে! জনগণকে যেভাবে তারা ভুলভাল বুঝিয়ে কোরআনের সংস্পর্শ থেকে নিবৃত্ত রাখতে চাইছে, তা মাঠে মারা পড়বে। এরকম আর আসা যাবে না—এই বলে তারা তিনজনেই প্রতিজ্ঞা করল। নিজেদের ভর্ৎসনা করে ঘরে ফিরে গেল।

কিন্তু পরের দিন সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে চিন্তা করল, কাল যেহেতু সবাই ধরা পড়ে গিয়েছে তাই আজ তেলাওয়াত শুনতে কেউ যাবে না। আমি একা গিয়ে কিছুক্ষণ শুনে আসি। এভাবে তিনজনই একই চিন্তা নিয়ে প্রতিজ্ঞা ভেঙে চলে গেল কোরআন শুনতে। ভোরের আলো ফুটতেই আবারও একে অপরের হাতে ধরা পড়ে গেল। এবারও আগের দিনের মতো নিজেদের ভর্ৎসনা করে যে যার মতো ঘরে চলে গেল। ওয়াদা করল আর আসবে না।
 
তৃতীয় রাতেও তারা কেউ বিছানায় থাকতে পারল না। অন্ধকার নেমে এলে লুকিয়ে লুকিয়ে আবারও চলে গেল কোরআন শুনতে। বরাবরের মতো দেখা হয়ে গেল তিনজনের। এখন তারা শক্ত হলো। বললো, আমরা মজবুত প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ না হলে হবে না। এভাবে তারা পরস্পর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরল। (সিরাতে ইবনে হিশাম: ১/৩১৫; দালায়েলুন নুবুওয়াহ, বায়হাকি: ২/২০৬; তাফসিরে ইবনে কাসির: ৫/৭৭)

তেলাওয়াত শুনলেই যেখানে আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়, অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র সুরেই আন্দোলিত হতে হয়, সেখানে অর্থ বুঝলে কী অবস্থা হবে বলাই বাহুল্য। আবু জেহেলরা কোরআনের অর্থ বুঝত। তাই তারা কোরআনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েও মন্ত্রমুগ্ধের মতো মহাসাহিত্য শোনার জন্য ব্যাকুল থাকত। এসব ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এসব আসলে মহান স্রষ্টার কালামের প্রভাব। 


বিজ্ঞাপন


কিন্তু কোরআনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো—কেউ যদি হেদায়েত চায়, তাহলে সে কোরআন থেকে হেদায়েত পায়, আর যে বিপরীত কিছু খোঁজে, তাহলে কোরআন তাকে তা-ই দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ এই কোরআনের মাধ্যমে অনেককে পথভ্রষ্ট করেন আবার অনেককে পথ প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে কেবল ফাসেকদেরই পথভ্রষ্ট করে থাকেন। (সুরা বাকারা: ২৬)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর