পুরান ঢাকার খাবারের নাম শুনলে জিভে জল আসবেই। কত পদের যে সুস্বাদু খাবার, কত যে বাহারি নাম! সেই স্বাদ নিতে নানা জায়গা থেকে ভোজনপ্রেমীরা ভিড় জমান পুরান ঢাকার খাবারের দোকানগুলোতে।
এই সুনাম অবশ্য অল্পদিনের নয়। দীর্ঘ ৪০০ বছরের অধিক সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকা মানেই সেরা আর বিখ্যাত খাবারের সমারোহ। সেসব বিখ্যাত আর মুখরোচক খাবারের চাহিদা ঘিরে জমজমাট হয়ে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীবাজার।
বিজ্ঞাপন
কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত একাধারে বসে ভাজাপোড়া, চিজ-বার্গার, ফ্রাই-পিৎজা, চা-কফি, জুস-চিপস, কাবাব, হরেকরকমের পিঠা আর আচারের স্বাদে অনন্য এই স্থান সন্ধ্যার পর থেকে ভিড়ে একাকার হয়ে থাকে।
সন্ধ্যার পর অফিস শেষ করে এসে বাসা যাওয়ার পথে ক্লান্ত শরীরে জিভকে শান্তি দিতে ভিড় জমায় লোকজন। সকল বয়সী লোকদের হরেক রকমের চা খেতে খেতে আড্ডায় মেতে উঠছেন, চিকেনের ওপর সস ঢালতে ঢালতে দিনশেষে ঘরে ফেরা চাকরিজীবীরা সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলছেন। হরেক রকম স্ট্রয়ে ফলের জুস বা মিল্ক শেকে চুমুক দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট শিশুর দল।
লক্ষ্মীবাজারের এই রাস্তায় সন্ধ্যার পর থেকেই ভিড় জমা শুরু হয়। গোটা শতেক দোকানে হরেক রকম খাবার তৈরি করা হয়। রোডের দুই ধারেই খাবারের দোকানগুলো বসে লিফলেট খাবারের মূল্য ঝুলিয়ে দিয়েছে।
চিকেন আইটেমের জন্য সেরা বিসমিল্লাহ নাবিল ফুড কর্নার, পিৎজা আইটেম তৈরি করে হট চিক, নানা রকম চা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে রাজকাচুরি, চিজ বার্গারের বিভিন্ন আইটেম নিয়ে বসেছে। এদের কেউ কেউ ভাজাপোড়ার পাশাপাশি ফ্রুট কর্নারও খুলেছে। ফ্রেশ জুস, নানা ফ্লেভারের কফি দোকানও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খোলামেলা জায়গায় গড়ে ওঠা দোকানগুলো টং বা ঢাবা ধরনের। দোকানগুলো আশপাশে প্লাস্টিকের চেয়ার, টুল সাজিয়ে ক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা করেছে। খাবারের থালা বা জুস কিংবা চায়ের কাপ হাতে সেখানে বসে মুখরিত হয় নানা বয়সী মানুষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিদ, শিমুল ও শিমু নিয়মিত লক্ষ্মীবাজারে আসেন খাবার খেতে। তাদের কাছে জানতে চাই, লক্ষ্মীবাজার স্ট্রিট ফুডের বিশেষত্ব ঠিক কোন জায়গায়।
তারা বলেন, বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ না থেকে, উন্মুক্ত খোলা জায়গায় বসে রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়ার স্বাদ পাচ্ছি। বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে আড্ডা দিতে পারছি, এটাই লক্ষ্মীবাজারে স্ট্রিট ফুডের বিশেষত্ব।
চিজ, ফ্রাইজ ও বার্গারের আইটেম নিয়ে পসরা খুলেছে ‘মামা ফুড কর্নার’। মামা ফুড কর্নারের শেফ শুভ জানান, আমাদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, ফ্রাইয়ের আইটেমগুলো বেশি চলে। তবে, ইদানীং ফিশ বার্গারের চাহিদা বেড়েছে।
চিকেন ফিল ট্রিটে চিকেন চিজ, চিজ প্যাটি, বারবিকিউ ও স্মোকি বারবিকিউ, টুইন চিজ ও মিনি চিকেন বার্গার পাওয়া যায়। চিকেন সাব, চিজ সাব, বারবিকিউ সাব— এ তিন রকমের স্যান্ডউইচ পাওয়া যায় সেখানে। অল্প দামে চার পিস চিকেন উইংসও পাওয়া যায়।
বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এখানে খাবারের স্বাদ মেটাতে আসেন। বিশেষ করে লক্ষ্মীবাজারের আশেপাশে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজ, সেন্ট গ্রেগ্ররী উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট থমাস স্কুলসহ বেশকিছু ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবাসিক হল না থাকার সংকটে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ এখানে খাবার খেতে আসেন। বাড়ি থেকে দূরে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা শীতকালীন মৌসুমের বাহারি পিঠার স্বাদ নেন এই লক্ষ্মীবাজারে এসে।