শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

স্ট্রিট ফুডের আসরে তরুণদের জমজমাট আড্ডা

রেজাউল করিম জীবন, রংপুর
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

স্ট্রিট ফুডের আসরে তরুণদের জমজমাট আড্ডা

ভোজনরসিকদের কাছে রংপুরের পরীবাগের ছোটখাটো একটি স্ট্রিট ফুড জোন ইদানীং হয়ে উঠেছে প্রিয় এক জায়গা। সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে ভিড় বাড়তে থাকে। পিৎজা, ফুচকা, কাবাব, মোমো, দোসা, বার্গার, পিঠা—কী না পাওয়া যায়।

তরুণদের আড্ডা এখন খোলা আকাশের নিচে। বিশেষ করে ফুটপাতের দোকানের বেঞ্চে কিংবা গোল টেবিলে। গোল করে বসে কিংবা দাড়িয়ে কখনও বেঞ্চে বসে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। আর এই আড্ডা ফাঁকে ফাঁকে চলে চা এবং চায়ের সাথে মুখরোচক খাবার। ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোর সামনের আড্ডাকে এখন স্ট্রিট ফুডের আসর বলে থাকে তরুণরা। তবে শুধু তরুণরাই এই স্ট্রিট ফুডের আড্ডা জমিয়ে সময় কাটান, তা নয়, সববয়সী মানুষই এখন অবসরে এই আড্ডায় শরীক হন। তবে তুলনামুলক তরুণরাই বেশি সময়ে ধরে থাকেন।


বিজ্ঞাপন


রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই ফুটপাতে মুখরোচক খাবারের দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। পিৎজা, ফুচকা, কাবাব, মোমো, দোসা, বার্গার, পিঠা—কী না পাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর নগরীর পার্কের মোড়, লালবাগ মোড়, মেয়রের মোড়, সুরভী উদ্যানের ফুচকা বাজার, সুপার মার্কেটের সামনে, টাউনহল চত্বর, সিটি বাজার, জাহাজকোম্পানী মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, ধাপ শ্যামলী লেন, চারতলা মোড়, শাপলা চত্বর, কাচারী বাজার, স্টেশন, বাসটার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকার মোড়ে এসব দোকানের সামনে তরুণদের স্ট্রিট ফুড খেতে দেখা যায়।

ফুটপাতের এসব দোকানের সামনে ছোট ছোট প্লাস্টিকের তুল, কাঠের বেঞ্চ, চেয়ার, গোল টেবিলের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে তরুণরা বসলে আর উঠতেই চায় না। জমে যায় আড্ডা। ফুটপাতের এসব দোকানে কী নেই, ফুচকা, চটপটি, ডিম বার্গার, হট কফি, বুটসিদ্ধ, পেঁয়াজু, বেগুনি, কলা ভাজা, লাউ ভাজা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, দুধ আর পাউরুটি, বার্গার, এগ ফ্র্রায়েড, চিকেন ফ্রাই, চিকেন গ্রিল, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, চাপ, বিরিয়ানিসহ বাহারি সব খাবার মেলে এখানে।

ফুটপাতে এসব ভাসমান দোকানগুলোর ভেতরে এলপিজি সিলিন্ডারসহ গ্যাসের চুলা রয়েছে। সেখানেই চলে রান্না। পরিস্কার ও বাহারি ডিজাইনের প্যানাপ্লেক্স ব্যানারে বাহারি খাবারের ছবি। বেশির ভাগ দোকানেই ভ্রাম্যমান ভ্যানের ওপর নিমার্ণ করা।


বিজ্ঞাপন


স্ট্রিট ফুডের আসরে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, তরুণ-তরুণীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নিত্য আগমন ঘটে। প্রজন্মের এ জম্পেশ আড্ডায় চায়ের পাশাপাশি চলে মুখরোচক খানাপিনা।

নগরীর কলেজ রোড মেয়রের মোড় এলাকায় একসঙ্গে প্রায় অর্ধ শতাধিক ফুটপাতের দোকান। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যায় ও কারমাইকেল কলেজের একাধিক ছাত্রাবাস ওদিকটায় থাকায় তরুণদের উপস্থিতিও বেশি হয়। 

ওখানকার দুলু’র চায়ের দোকানে সবচেয়ে ভিড় লক্ষ করা যায়। শুধু চায়ের জন্য বিখ্যাত দোকানটি। এখানে বেশ কয়েক প্রকারের চা বিক্রি হয়। 

এরমধ্যে তন্দুরী চা, মালাই চা, বাটার চা, চকলেট চা, হরলিক্স চা, স্ট্রবিরি চা, বাদাম চা অন্যতম। রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী, তানজিদ, ববি, নাঈম বলেন, এই দোকানের মালাই চা অনেক সুস্বাধু ও মজা। প্রায় প্রতিদিন খেতে আসি। চা শেষ হলেও চায়ের স্বাদ সবসময় মুখে লেগে থাকে। পাশেই আকবরের দুধ ডিমের পুষ্টিঘর। এখানে ডিম বার্গার, হট কফি পাওয়া যায়। এখানে কথা হয় কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের রাকিব, সুমন, জলি, মীরা, নয়নের সাথে। তারা সবাই মিলে হট কফি খাওয়ার জন্য এসেছেন।

নেসকো অফিসের সামনেই কোয়েল পাখির ফ্রাই এর দোকানেও সবসময় ভীড় লেগে থাকে। এখানে কোয়েল পাখির গরম গরম ফ্রাই খেতে খুব মজা বলে জানান, আশফাকুল, তুরাগ, শ্যামল, কবীর, তৃশা, মনি।

পার্কের মোড়ে রবিউলের খিচুরির দোকানেও চলে জম্পেস আড্ডা। নানা রকমের ভর্তার সাথে গরম খিুচরি ভালোই লাগে। তাছাড়া সস্তায় খিচুরি পাওয়া যায় এখানে। তাই সব শ্রেণির মানুষের ভীড় লেগেই থাকে।

বিকেলে রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মানিকের ভ্রাম্যমান ডিম বার্গারের দোকানের সামনে কথা হয় হিমেল, হৃদয়, মিজানের সাথে। তারা সবাই মিলে ডিম বার্গার খাচ্ছেন। মাত্র ১৫ টাকায় মেলছে ডিম বার্গার।

সুপার মার্কেটের সামনে কয়েকজন তরুণ ঘিরে রেখেছে ঝাল চানাচুরের দোকান। খুবই সুস্বাধু হওয়ায় তরুণদের আগ্রহের কমতি নাই। চানাচুরওয়ালা জামিলুর জানান, সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরমধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় সব। সব বয়সী মানুষের চাহিদায় থাকলেও তরুণরাই বেশি খায় বলে জানান তিনি।

জাহাজকোম্পানীর মোড় এলাকায় গরুর ভুড়ি বটের সাথে আতব চালের খিচুরি। ছোট্র দোকানেই হাজার হাজার টাকার খিচুরি বিক্রি হয় প্রতিদিন। ব্যস্ততম রোডের পাশে হওয়ায় বেঞ্চে বসে খাওয়ার সুযোগ নাই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে হয়।

রংপুর টাউনহলের পাশে ফুটপাতে মাহবুব, মামুন ও আইয়ুবের চায়ের দোকানে আড্ডায় বেশিভাগে দেখা মেলে শিল্পী, নাট্যকার, কবি সাহিত্যিকদের। চায়ের সাথে চলে গান, কবিতা আবৃত্তি। 

তবে রংপুরে এরকম স্ট্রিট ফুডের আসর এক দশক আগেও তেমন ছিল না। ইদানিংকালে এই স্ট্রিট ফুডের আসর বেশি দেখা যায় নগরীর বিভিন্ন মোড়ে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর