সিলেট নগরীর প্রায় সর্বত্রই এখন জমজমাট স্ট্রিট ফুড। বিকেল হলেই জমে ওঠে বিভিন্ন সড়কে স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলো। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই ভিড় করেন স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতে। তবে সিলেটের মানুষের খাদ্য তালিকায় যত স্ট্রিট ফুডই থাকুন না কেন তার মধ্যে পিঠাপুলি থাকবেই। এজন্য এখানে পিঠার চাহিদাও প্রচুর।
নগরীতে শীতের পড়ন্ত বিকেল থেকে রাত ১০টা অব্দি রাস্তার পাশে নানান মুখরোচক পিঠা-পুলি তৈরি, বিক্রি ও খাওয়ার মহাযজ্ঞ চলে। হরেক রকম ও স্বাদের পিঠাপুলিতে ভোজনবিলাসীরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে সিলেট নগরীর বন্দর বাজার ও জিন্দাবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় পিঠা বিক্রির ধুম। চলে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত। যান্ত্রিক জীবনে বাসা বাড়িতে এখন সেভাবে পিঠা তৈরি হয় না। এজন্য সন্ধ্যার পর মানুষ পিঠার দোকানে ভিড় জমায় পিঠা খেতে।
দেখা যায় অধিকাংশ দোকানগুলো পরিচালনা করছেন নারী-পুরুষ মিলে। সিলেটের মানুষের খাদ্য তালিকায় পিঠা থাকবেই। এজন্য এখানে পিঠার চাহিদাও প্রচুর। শুধু শহরের রাস্তা নয় শহরতলীর অলি-গলিতেও শীতের পিঠার দোকান বসে। সেখানেও রীতিমতো ভিড় জমে যায়।
দেখা যায়, পথের ধারে অস্থায়ী দোকানে তৈরি হচ্ছে মাংস দিয়ে খাওয়ার জন্য মজাদার ছিটা পিঠা। এছাড়া ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, পাটি সাপ্টা পিঠা তো আছেই। পথচারীরা গরম পিঠার স্বাদ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন তৃপ্তি নিয়ে। হরেক রকম পিঠা নিজেরা খেয়ে আবার বাসার জন্যও নিচ্ছেন অনেকে।
এছাড়াও তিলের পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, ডিম পিঠা, বাদাম-কিসমিস দিয়ে তৈরি পিঠাও তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে বাদাম, চানাচুর, ছোলা-বুট, মুড়িমাখা, ঘটিগরমও দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা-মুড়ির সঙ্গে ভাজাপোড়া পেঁয়াজুর মিক্সার জনপ্রিয় আইটেম। এছাড়া এখানে আলুপুরি, আলুর দম, ভেলপুড়ি, হালিম ও বিরিয়ানিও পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকজন ভাপা পিঠা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বছরের অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন ধরণের কাজকর্ম করে থাকেন। কিন্তু শীত পড়তেই শুরু করেন পিঠার ব্যবসা। বড় কোনো দোকান নয়, মহানগরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে বা ফুটপাতে ঠেলাগাড়িতে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পাওয়া যায় ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার ও চিতই পিঠার দোকান।
আগে পিঠার দাম ছিল ৫ টাকা। বর্তমানে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায় প্রতিটি ভাপা পিঠা বিক্রি করতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের দামে আর পোষায় না বলে জানান তারা।
দেখা যায় বিক্রেতা নিপুণ হাতে চালের গুড়ার সঙ্গে নারিকেল এবং গুড় দিয়ে তৈরি করছেন ভাপা পিঠা। বর্তমানে সিলেটে এই পিঠার চাহিদা ব্যাপক। বিকেল গড়াতেই শুরু হয় বিক্রি, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শীত যত বাড়বে, এই পিঠার চাহিদাও ততই বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা।
এছাড়া মাটির চুলায় কাঠের লাকড়িতে তৈরি হচ্ছে চিতই পিঠা। গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠার সংগে চিংড়ি, শুটকি, সরিষা ও ধনে পাতাসহ নানা পদের সুস্বাদু ভর্তায় জিহ্বায় জল আনছে ভোক্তাদের।
পিঠা খেতে আসা যুবক রুহেল জানান, বাড়িতে সব সময় পিঠা তৈরি করা সম্ভব হয় না। দোকানগুলোতে খুব সুন্দর ও সুস্বাদু পিঠা তৈরি করে। তাই প্রায় দোকান থেকে পিঠা খাই।
ক্রেতা লাভলী আক্তার জানান, শীত মৌসুম এলে আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পিঠা খাই ও পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যাই।
পিঠা বিক্রেতা জামাল জানান, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্য কাজ করি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় করি। আর এ ব্যবসায় পুঁজিও লাগে খুব কম।
সিলেট নগরীর পিঠা বিক্রেতা জমির উদ্দিন জানান, পিঠা বিক্রি করে আমার সংসার চলে। বর্তমানে বাজারে চিনি ও গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় পিঠায় লাভ কম। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
সিলেট শহরে প্রায় ২০০ ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে ২/৩ জন লোক পিঠা তৈরি ও বিক্রির কাজে ন্যাস্ত থাকে। কর্মসংস্থান হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার বেকার তরুণ-তরুণীর। পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে এর আয়-রোজগারে খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন অনেক পরিবার।
এসব পিঠার পাশাপাশি সিলেট শহরে রাস্তার পাশে ফুটপাতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ফুড কোর্ট। এখানে উন্নত রেস্টুরেন্টের মতো সব দামি খাবার সস্তায় পাওয়া যায়। এখানে তরুণ ও যুবকেরা বেশি ভিড় করেন। বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও চাকরিজীবী মানুষের পছন্দের খাবারের স্থান এসব স্ট্রিট ফুডের শপগুলো। এখানে ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যায় চিকেন ফ্রাই, চিকেন স্টিক, চাপ, গ্রিল, বার্গার, কাবাব, পাস্তা, চিকেন-বিফ আইটেম থেকে শুরু করে বিরিয়ানিসহ জুস, স্যুপ, মিক্স ফ্রুটস, কফিও পাওয়া যায়।