মূল্যস্ফীতির প্রভাবে যখন নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী তখন এর প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের খাবারেও। প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া সস্তা খাবারের দাম। স্বাস্থঝুঁকি জেনেও যদিও যেসব মানুষ এসব খাবারের উপর নির্ভরশীল কিংবা মুখরোচক হিসেবে পছন্দ করেন দামবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন তারাও। বিক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে খরচ পোষাতে তাদেরকেও দাম বাড়াতে হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই আছে। কেউ দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন, কেউবা বসে। আবার কেউ খাবারের জন্য অপেক্ষায় আছেন। কী নেই এসব স্ট্রিট ফুডের দোকানে। সিঙাড়া, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফুচকা-চটপটি থেকে শুরু করে বার্গার, পিৎজা, জিলাপিসহ রেস্টুরেন্টের প্রায় সর্ব প্রকার খাবার পাওয়া যায় ফুটপাতে। স্বল্পমূল্যে ফুটপাতের দোকানগুলোতে যেকোনো খাবার পাচ্ছেন ভোজনরসিক মানুষ।
বিজ্ঞাপন
শীতের মৌসুম হওয়ায় এখন স্ট্রিট ফুডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠাসহ নানান ধরনের শীতের পিঠার। এসবের পাশাপাশি ঝালমুড়ি, পানিপুরি, রোল, বিভিন্ন ধরনের চপ ও ভাজাপোড়া খাবারের চাহিদা বেড়েছে। শীতের মৌসুমে ভাজাপোড়া খাবারের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, কড়াই থেকে নামানো গরম গরম চপ ও অন্যান্য খাবার খেতে নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
ফুটপাতের ভাজাপোড়া মুখরোচক খাবারের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বছর দুয়েক আগেও যে সিঙাড়া বিক্রি হতো ৫ টাকায়, এখন তা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও আগের চেয়ে আকারে ছোট। এছাড়া আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজুর দাম হয়েছে ১০ টাকা পিস। যেখানে ২০-৩০ টাকায় এক প্লেট ফুচকা-চটপটি পাওয়া যেত, এখন প্রতি প্লেট বিক্রি হয় ৫০-৭০ টাকায়।
আরও পড়ুন
মূলধন দেড় হাজার, মাসে আয় ৩০ হাজার
হাজার টাকার পিৎজাও মেলে ফুটপাতে
জেনেশুনেই ‘বিষ’ খাচ্ছে সবাই!
কতটা স্বাস্থ্যকর স্ট্রিট ফুড?
কথা প্রসঙ্গে এসব দোকানে খেতে আসা ক্রেতারা বলেন, আগের চেয়ে ফুটপাতের খাবারের জিনিসের দাম এখন দ্বিগুণ হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে পেঁয়াজু বেগুনি খেতে আসা সাব্বির বলেন, আগে এসব দোকানে পাঁচ টাকায় পেঁয়াজু-বেগুনি বিক্রি হতো। এখন ১০ টাকার নিচে কিছু নেই। সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। পাশেই আরেকজন বলেন, সবকিছুরই দাম বাড়ছে, অহন তারাও দাম বাড়াইছে। আবার সিঙাড়ার সাইজ দ্যাহেন। অর্ধেক হইয়া গেছে। তাও আগের থেইকা দ্বিগুণ দাম।
বিজ্ঞাপন
এই দোকানের দোকানদার মোনারুল বলেন, জিনিসপত্রের দাম কই গিয়া ঠেকছে সেটা তো আমাদের থেইকা আপনারাই ভালো জানেন। আমার এই কড়াইতে একবারে ১০-১৫ কেজি তেল দেওয়া লাগে। আগে এক কেজি তেল কিনতাম ৭০-৮০ টাকায়। এখন ডাবল দামে কিনতে হয়। ময়দার দাম, বেসনের দাম, ডালের দাম— সবকিছুরই দাম বাড়ছে। কাজেই আমাদেরকেও দাম বেশি দিয়ে বেচতে হচ্ছে।
শুধু এই ভাজাপোড়া বিক্রেতাই নয়, ফুটপাতে যেখানে সেখানে বিক্রি হওয়া ৫-১০ টাকার ঝাল মুড়িও এখন ১৫-২০ টাকা হয়ে গেছে। অধিকাংশ জায়গায় ২০ টাকার নিচে নেই। মতিঝিলের ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করা সোলাইমান বলেন, অহন ২০ টাকার নিচে বিক্রি করলে পোষায় না। সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হয়। আমরা কি করুম। আগে মুড়ি কিনছি ৪০-৫০ টাকা কেজি। এখন সেটা কিনতে হয় ৭০-৮০ টাকা কেজি। এক কেজি ছোলা কিনতে হয় ১০০ টাকার উপরে। আগে আমরাই ১০ টাকা ঠোঙ্গা বিক্রি করেছি। এখন সবনিম্ন ২০ টাকা।
এদিকে দাম বেড়েছে বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাতের দোকানগুলোতেও। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ আসেন এসব জায়গায় খাওয়ার জন্য। দাম বেশি হওয়ায় তাদেরকেও খেতে হয় এখন হিসেব করে। এসব দোকানে খেতে বসলে এখন ১০০ টাকায় হয় না। শুধু ডাল-ভর্তা দিয়ে ভাত খেতেই ৫০-৬০ টাকা চলে যায়। যদি ডিম কিংবা মাছ মাংস নেওয়া হয় তবে গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি।
টিএই