শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

তিল ঠাঁই নেই উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোয়, ভোগান্তি চরমে

আমিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

তিল ঠাঁই নেই উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোয়, ভোগান্তি চরমে
উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোয় মাথা গোঁজার মতোও জায়গা নেই | ছবি: ঢাকা মেইল

ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে একাধিক ট্রেন। আন্তঃনগর, কমিউটার, লোকাল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোতে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ট্রেনগুলোতে ভিড় তুলনামূলক কম। সেই সঙ্গে এসব ট্রেনে যাত্রীর চাপও তেমন নেই। এ কারণে যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করছেন।


বিজ্ঞাপন


তবে উল্টো চিত্র উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোয়। বিশেষ করে জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়ের চলাচলকারী ট্রেনগুলোয় মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই। অনেকে টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

Train

যাত্রীদের দাবি- উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে ভিড় সবচেয়ে বেশি। পুরো ট্রেনে বিন্দুমাত্র জায়াগা ফাঁকা থাকছে না। ট্রেনে উঠতেও বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকে দরজা দিয়ে উঠতে না পেরে জানালা দিয়েও উঠছেন ট্রেনে।

এসবের মধ্যেও পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে সবাই মিলে ঈদ করতে চরম ভোগান্তি উপেক্ষা করেও ছুটছেন যাত্রীদের। পুরুষেরা ঠেলাঠেলি করে ট্রেনে কোনোরকম উঠতে পারলেও নারীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। যারা ছোট বাচ্চা নিয়ে যাত্রা করছে তাদের ভোগান্তিও চরমে।


বিজ্ঞাপন


একটি ট্রেনে আসনসংখ্যা ১১শ’ থেকে ১২শ’ পর্যন্ত। কিন্তু সেই ট্রেনেই প্রায় ৫ গুণ বেশি মানুষ যাতায়াত করছে। একটি ট্রেনে এক হাজার ২০০ জনের সিট আছে, কিন্তু সেই ট্রেনেই যাতায়াত করছে প্রায় ১০ হাজারের মতো মানুষ। বিন্দুমাত্র ফাঁকা থাকছে না ট্রেন। এ জন্য অনেকে ছাদ কিংবা ইঞ্জিনের মধ্যেও যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও এবার রেলমন্ত্রীর আদেশে ট্রেনে ও ইঞ্জিনে যেতে চাইলেও তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

Train

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে দিনাজপুর যাবেন রফিক হাসান। ঢাকা মেইলকে তিনি জানান, আমার স্ত্রী ও দুই বছর বয়সী আমার ছোট ছেলে রোহানও আমার সঙ্গে আছে। এবার লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি, তাই ব্যাগও আছে সঙ্গে। তবে বাচ্চা আর ব্যাগ নিয়ে মুশকিলে পড়েছি। ট্রেনে উঠতে যে হারে ঠেলাঠেলি আর হুড়োহুড়ি, কীভাবে ট্রেনে উঠবো, সেটিই এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয়।

রফিকের মতো অনেকেরই চিন্তা এখন একটিই। ট্রেনে উঠতে পারবো তো!

অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারলেও ভোগান্তির শেষ নেই উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে। কোনোরকম ট্রেনে উঠতে পারলেও কাঙ্ক্ষিত সিট অবধি পৌঁছাতে না পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রীই।

এমনই একজন পরিতোষ কুমার। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, তিনটি টিকিট কেটেছি। আমার সঙ্গে স্ত্রী ও আমার ছয় বছরের মেয়ে রয়েছে। আমার সিট ‘জ’ বগিতে। কিন্তু ‘জ’ বগিতে ভিড় অনেক বেশি, থাকায় উঠতে পারিনি। পরে ‘ঘ’ বগিতে উঠি। ভেবেছিলাম কোনোরকম ট্রেনে উঠলে পরে ভেতর দিয়েই সিটে যাবো। কিন্তু কোনোভাবে ট্রেনে উঠতে পারলেও বঙ্গবন্ধু সেতুর আগে পর্যন্ত সিটে পৌঁছাতে পারিনি। এত মানুষ ছিল যে পা রাখার মতো জায়গাটুকুও নেই। পরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন থামলে অনেকেই নিচে নেমে দাঁড়ায়। ওইসময় ঠেলাঠেলি করে সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে  পেরেছি।

Train

পরিতোষ আরও বলেন, ছুটিতে পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে যাচ্ছি। নিরাপদ যাত্রার জন্য ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু অবস্থা এরকম জানলে ট্রেনে কখনও যেতাম না। ঈদে চরম খারাপ অভিজ্ঞতা হলো। ভবিষ্যতে আর ট্রেনে যাত্রা করবেন না বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার ঢাকা মেইলকে বলেন, উত্তরবঙ্গের ট্রেনে যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে। পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকায় ও সিঙ্গেল লাইনের জন্য এই রুটে যাত্রীদের চাপ বেশি।

রেল স্টেশনের এই কর্মকর্তা জানান, এই অঞ্চলে লাইন একটা। ট্রেনের সংখ্যাও কম। যাত্রীদের তুলনায় কম ট্রেন চলাচল করে তাই যাত্রীদের ভিড়ও থাকে বেশি। বর্তমানে লাইনের সক্ষমতার বেশি ট্রেন চলাচল করছে। তাই যতদিন এই রুটে দুটি লাইন ও পুরো লাইন ব্রডগেজ না হওয়া পর্যন্ত ভোগান্তি কমবে না বলেও জানান তিনি।

এএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর