দোকানে ছিল কোটি টাকার মালামাল। প্রতিদিন লাখ টাকা হত লেনদেন। মাস শেষে সবার খরচ মিটিয়ে পুঁজি বাড়ানোর তাগিদ। এই ছিল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যবসার ধরণ। লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করে কোটি টাকার মালামাল দোকানে তুলেছেন মার্কেটটির অধিকাংশ ব্যবসায়ী। সেখান থেকে হুট করে ধ্বস। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের কতজন ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? তবে তারা পথ খুঁজছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পোশাকের দোকানের মধ্যে অন্যতম পরিচিত নাম চন্দ্রবিন্দু। দোকানটির মালিক মো. বিল্লাল হোসেন। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতের আগুনে দোকানের দুই তৃতীয়াংশ মালামাল পুড়ে গেছে। যেটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন, তাই নিয়ে পুনরায় নামতে চান জীবনযুদ্ধে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কর্মব্যস্ত বিল্লাল হোসেন। দোকানের ভেতরের সব ছাই-কয়লা বের করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে দোকান পরিষ্কারের।
আলাপকালে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার মালামাল দোকানে ছিল। ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মালামাল বের করতে পারছি। এখন সব কিছু ঠিক করে আবার বসতে চাই। সেটা যত দ্রুত হোক।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদেরকে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর লাখ লাখ টাকা দেনা। বাকীতে পণ্য নিয়ে বিক্রি করেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। যাদের থেকে বাকীতে পণ্য নেওয়া হয়, তাদের চাপ আছে ব্যবসায়ীদের উপর। সেই চাপ সামলাতে এখন দিশেহারা নিঃস্ব এই ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
মাদারীপুর মসলাশপ থেকে ১৯ লাখ টাকা পাওনা আলী হোসেন সুমনের। চকবাজার চাম্পাতলির থেকে সুমা এন্টারপ্রাইজের মালিক তিনি।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, কৃষি মার্কেটের একমাত্র মাদারীপুর মসলাশপে মসলা সরবরাহ করেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে আসেন টাকার জন্য।
আলী হোসেন সুমন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে এসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যাই। কিন্তু আগুনে তো সব পুড়ে গেছে। পুড়েছে ওনার দোকান। দিশেহারা আমি।’
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ফের উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওনাকে তো তুলতে হবে। নইলে আমার আগের টাকা আটকে যাবে। চাপ দিয়ে তো লাভ নেই।’
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের মার্কেট নিয়ে পাঁয়তারা চলছে। তারা বহুতল ভবন করার কথা বলে। আমাদের এইখানে সব শেষ। মাথার উপর ঋণের বোঝা। এখন না হয় পাওনাদাররা কিছু বলতেছে না। কয়েকদিন পর তো ঠিকই বলবে। তখন আমরা ব্যবসা করব কই থেকে? আমাদের ব্যবসা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বহুতল ভবনের দরকার নাই। আমাদেরকে এখানে বসার সুযোগ দেওয়া হোক। আমরা নিজেদেরটা নিজেরা বুঝে নেব।’
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ৪টার দিকে মার্কেটের সামনে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা নিজেদের চাহিদা তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের কেউই বহুতল মার্কেট তৈরির পক্ষে নয়। সকলেই আগের মতো নিজ নিজ দোকানে বসতে চান।
সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা শুক্রবার ও শনিবার দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মালিক-শ্রমিক সকলেই একত্রিত হয়ে কাজে নেমেছেন। দোকানের পুড়ে যাওয়া মালামাল ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে দোকানের ধাতব অংশগুলো।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সভাপতি ২৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমুল্লাহ সলু। মার্কেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে তাকে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
বুধবার ভোররাতে আগুনের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান। শুক্রবারও ঘটনাস্থলে দেখা গেছে তাকে।
ব্যবসায়ীদের বিষয়ে সাদেক খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করতেছি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবসাটা আমরা চালু করতে চাই।’
মার্কেটটিকে এখন বহুতল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জানান, এ সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশনের। যেহেতু মার্কেটটি সিটি করপোরেশনের অধীনস্থ। তিনি বলেন, ‘যদি বহুতল করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীদের একটা ব্যবস্থা করে তারপর করতে হবে।’
জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ দোকানের কর্মীদের জন্য দুই কেজি করে চাল, এক লিটার তেল, এক কেজি ডাল দেওয়া হয়েছে।
কারই/এএস