একশো বর্গফুট জায়গা নিয়ে কাপড়ের দোকান। একই আকারে মোহাম্মদ আলীর দোকান ছিল দুটি। দুই দোকানে মালামাল ছিল প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার। রক্ষা হয়নি একটি কাপড়ও।
একই অবস্থা মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের। দোকান জুড়ে ছিল প্রায় কোটি টাকার মালামাল। তার ভাষ্যমতে, ‘এক টাকার মালও বাঁচাতে পারি নাই।’
বিজ্ঞাপন
দোকানের দিকে তাকিয়ে অবিরত কেঁদে চলেছেন মোরশেদ আলমের মেয়ে। একমাত্র উপার্জনের পথ হারিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে মোরশেদ।
নিজের সবটুকু পুঁজি ব্যবসায় লাগিয়ে শাড়ি তুলেছেন আরেক ব্যবসায়ী। চোখের সামনে সব কিছুকে মূল্যহীন দেখে মেজাজ হারিয়েছেন তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আর নাম বইলা লাভ কি ভাই? আমার এক কোটি টাকার বেশি মালামাল। কিছু নাই। সব শেষ আমার।’
এক দিকে ব্যবসায়ীদের যেখানে সব শেষ। সেখানে সুযোগ নিচ্ছেন একদল মানুষ। স্থানীয় বস্তির বাসিন্দারা আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কাপড়গুলো যে যার মতো লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে শতাধিক নারী ও শিশুর দেখা মিলেছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। যাদের এই পুড়ে যাওয়া দোকানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ তারা সকাল থেকে মার্কেটে অবস্থান করছেন।
বিজ্ঞাপন
কাপড়ের দোকানের সামনে পুড়ে যাওয়া কাপড় স্তুপের মধ্যে বাছাবাছি করতে দেখা যায় এক নারীকে। কি খুঁজছেন? ঢাকা মেইলের এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। আপনার দোকান ছিল এখানে? এমন প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তিনি।
একই কাজে ব্যস্ত আরেক নারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তার নাম শাহিনূর বেগম। বাসা শেখেরটেক এলাকায়। এসেছেন কাপড় কুড়িয়ে নিতে।
শাহিনূর জানান, তিনি দুই বস্তা কাপড় কুড়িয়েছেন। যা বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের বাসায়।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্কেটে কাপড়ের অনেক দাম। এখন তো এইখানে সব পুইড়া গেছে। যা পারি নিয়া যাই। পোলাপানরে ধুইয়া দিলে পরব।’
শাহিনুরের মতো আরও অনেক নারীই বস্তা বস্তা কাপড় ও বিভিন্ন মালামাল নিয়ে রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মালামাল বহিরাগতদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। যে যার মতো লুটপাটে ব্যস্ত।
আহসানউল্লাহ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘সামনের গেটে এখন পুলিশ আছে। পেছনের গেটে নাই। পেছন দিক থেকে অনেক লোকজন ঢুকতেছে, যে যা পাচ্ছে, হাতে করে নিয়ে যাচ্ছে। আমার দোকানের মাল আমার সামনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, বলে তার চাচার দোকান।’
লুটপাটের মহাউৎসবে মেতেছেন একদল শিশু-কিশোর। ধাতব জাতীয় যা পাচ্ছেন, তা নিয়ে থলেতে ভরছে তারা। এক সঙ্গে অনেক মালামাল নিয়ে বের হচ্ছে এই শিশু-কিশোররা। একেকবার এসে একেকটা জিনিস নিয়ে যাচ্ছে তারা।
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ডানদিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনে প্রায় ৪০০ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মার্কেট ও কাঁচাবাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৭০০-৮০০ দোকান ছিল।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া ছিল ৩১৭টি। এরমধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
কারই/এএস