সপ্তাহখানেক বাদেই মেয়ের বিয়ে। এজন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে প্রায় তিন লাখ টাকা জমিয়েছিলেন জহির উদ্দিন। সেই টাকা রেখেছিলেন দোকানের ক্যাশে। ভেবেছিলেন, বিয়ের আগে জরুরি কাজে খরচ হলেও দোকান থেকেই আবার সেই টাকা উঠে আসবে। কিন্তু মার্কেটজুড়ে লাগা ভয়াবহ আগুনে শুধু জহিরের দোকানই পুড়েনি, সঙ্গে ছাই হয়েছে মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো সেই তিন লাখ টাকাও।
বুধবার ভোররাতের দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে লাগা সেই আগুনে ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী জহিরের মতো পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকে। আগুনের গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বপ্নও যেন এখন ধূসর!
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুড়ে ছাই হওয়া নিজের দোকানের দিকে অনেকটা বিমুর্ষ হয়ে চেয়ে থাকতে দেখা যায় জহির উদ্দিনকে। মুখে তেমন একটা কথাও নেই। পুরো মার্কেটের সবচেয়ে বড় ক্রোকারিজ দোকানি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন প্রায় নিঃস্ব! আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েছে ১৫ লাখ টাকার মালামাল।
বিজ্ঞাপন
রাতে ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে জহির বলছিলেন, কত ক্ষতি হয়েছে এসব বলে এখন লাভ কি! বড় মেয়ের বিয়ে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। এজন্য প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্যাশে রেখেছিলাম। ভাবলাম আবারও দোকান থেকে সেই টাকা উঠে আসবে। কিন্তু এর মাঝেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা।
জহির বলেন, ভোরে আগুনের খবর শুনেই ছুটে আসি। তখন ভোর চারটা। ওই সময় আগুনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া দোকানের কাছেও যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না।
রাজধানীর এই ব্যবসায়ী স্ত্রীসহ দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরে। বড় মেয়ের বিয়ের জন্য সংগৃহীত টাকা পুড়ে যাওয়ায় এই ক’দিনে তা কীভাবে জোগাড় করবেন- সেই চিন্তা এখন ‘চেপে ধরেছে’ জহির উদ্দিনকে।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের এই ব্যবসায়ীর মতোই আগুনে পুড়েছে অনেকের সারা জীবনের সঞ্চয় আর স্বপ্ন। কেউ কেউ তো পুরোপুরি পথে বসার উপক্রম! তাদেরই একজন জাহাঙ্গীর আলম দুলাল। তিল তিল করে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃষি মার্কেটে গুছিয়ে তুলেছিলেন নিজের মুদিখানার দোকান। যেখানে মালামাল ছিল প্রায় ৩৫ লাখ টাকার। আগুনে সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এমনকি দোকানে রাখা ভাগিনা ওমর ফারুকের নতুন একটি মোটরসাইকেলও পুড়ে ছাই হয়েছে সেই আগুনে। সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে সম্প্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকায় সেই মোটরসাইকেলটি কিনেছিলেন ওমর ফারুক। তিনিও সেই কষ্ট যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। বারবার বলছিলেন, ‘পুরাতন মোটরসাইকেল পুড়ে গেলেও মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু তিলে তিলে জমানো সঞ্চয়ের টাকায় কেনা নতুন মোটরসাইকেলটিই পুড়ে গেল। এ কষ্ট বোঝানো কঠিন।’
শুধু জহির উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল কিংবা ওমর ফারুকই নয়, বুধবার ভোররাতে লাগা আগুনে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে কৃষি মার্কেটের শত শত ব্যবসায়ীর। যারা গতকাল পর্যন্ত লাখপতি ছিল, তারাও আজ প্রায় নিঃস্ব! কাল কি হবে তা-ও অজানা! ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষগুলো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে।
যদিও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা পুড়ে যাওয়া দোকান আবারও বরাদ্দ চান। তবে এ ক্ষেত্রে সহজ শর্ত রাখার দাবি তাদের।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা অবধি কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্ত করতে তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছিল। দুটো তালিকার একটি দোকান মালিক সমিতি ও অন্য তালিকাটি করছে সিটি করপোরেশন। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তালিকার কাজ শেষ হয়নি।
এমআইকে/আইএইচ