২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আকস্মিক আক্রমণ করে রাশিয়া। তারপর জল অনেকদূর গড়িয়েছে। পরাশক্তিধর রাশিয়া ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। আর পাল্টা আক্রমণে দিনদিন আরও ক্ষুরধার হচ্ছে ইউক্রেন। এর পেছনে রহস্য হলো পশ্চিমা অস্ত্র। পশ্চিমাদের থেকে অস্ত্র ও অর্থ দুটোই ব্যাপক আকারে পাচ্ছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনে ভারী অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে ন্যাটো জোটসহ পশ্চিমা দেশগুলো। পশ্চিমাদের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, পশ্চিমাদের এসব অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত ও জটিল করে তুলবে।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনকে ন্যাটোর ট্যাংক সরবরাহের সঙ্গে দুটি বিষয় জড়িত- যা এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নেটো বনাম রাশিয়ার মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, তাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ও জার্মানির লেপার্ড ট্যাংকে বিশেষ একটি গোলা ব্যবহার করা হয় - যা দিয়ে শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও কংক্রিটের বাংকার ধ্বংস করা যায়।
সমর-বিশেষজ্ঞ এবং কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলি বলেন, 'রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে যদি এ ধরনের গোলা তাদের এলাকায় বা তাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় তাহলে একে পারমাণবিক অস্ত্র-সমতুল্য বলে ধরা হবে এবং প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তাহলে যুদ্ধের মাত্রা একধাপ ওপরে উঠে যাবে এবং সেটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে।'
বিজ্ঞাপন
আরেকটি দিক হচ্ছে ন্যাটোর ট্যাংকের পাশাপাশি ইউক্রেনের মাটিতে পশ্চিমা প্রশিক্ষক ও সামরিক উপদেষ্টাদের সম্ভাব্য উপস্থিতি। সৈয়দ মাহমুদ আলি বলছেন, ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক প্রশিক্ষক ও উপদেষ্টার উপস্থিতি ২০১৪ সাল থেকেই ছিল। উত্তর ইউক্রেনে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর রাশিয়া আক্রমণও চালিয়েছিল - যাতে বেশ কিছু লোক হতাহত হয়। তবে এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে।
রুশ বিষয়ক বিশ্লেষক স্টেফেন ডিয়েল বলছেন, মস্কো ইতোমধ্যেই এ যুদ্ধকে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছে।'
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে পশ্চিমা বিশ্ব।
কিন্তু এর পরও ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অংশ দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী এবং তার অধিকাংশের ওপর সে দখল এখনও তারা বজায় রেখেছে। এসব অংশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া তার নিজের অংশ বলে ঘোষণা করেছে, অনেক জায়গায় স্কুলের পাঠ্যক্রমে তা পড়ানো হচ্ছে।
ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণার পরপরই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের দাবি করেছেন জেলেনস্কি। শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে সাড়া না দিলেও সম্প্রতি কিয়েভ সফর ও বিপুল অংকের সামরিক সহায়তা অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সৈয়দ মাহমুদ আলির কথায়, যুদ্ধের সময় ট্যাংক বহরকে কার্যকর হতে হলে আকাশ থেকে যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা দরকার। তবে তিনি বলছেন, নেটো এফ-১৬ বা এ জাতীয় অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দিলে তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। রাশিয়া হয়তো তখন নেটোর বিরুদ্ধেও কোন পাল্টা পদক্ষেপের দিকে যেতে পারে।
স্টিফেন ডিয়েল মনে করেন, ইউক্রেনকে এফ-১৬ বিমান দেয়া হলেও তা রুশ অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আনতে পারবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, 'এফ ১৬এর মত যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেয়া হলে, আমার ধারণা - তার সাথে এরকম শর্তও থাকবে যেন এগুলো শুধু ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্যদের তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।;
তার মতে, 'পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সাহায্য করছে যাতে তারা পূর্ব ইউক্রেন ও ক্রাইমিয়ার অধিকৃত এলাকা থেকে রাশিয়াকে হটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এমন কোন অস্ত্র তারা ইউক্রেনকে দিতে চায় না যা দিয়ে কিয়েভের বাহিনী রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে যুদ্ধ করতে পারে।'
যদি পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয় তাহলে রাশিয়া পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হয়তো দেরি করবে না। ইউক্রেনে এখন যে ছায়াযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি তখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
একে